শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট
খুনের দিন নিহত ঠিকাদারকে নিজের স্কুটিতে চাপিয়ে তপনে নিয়ে গিয়েছিলেন মৌমিতা। সেখানে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে সাদ্দাম নাদাপকে খুন করেন তিনি। সোমবার খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময়ে এমনটাই জানিয়েছেন খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মৌমিতা।
মালদার ইংরেজবাজার ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশের উপস্থিতিতে এ দিন মৌমিতা ও তাঁর স্বামী রহমানকে তপন থানার সিহুর এলাকার বালকাহারা গ্রামে এনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
তাঁদের জেরা করে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, রক্তমাখা বালি, সিমেন্ট এবং একটি শিলনোড়া, যার সাহায্যে নষ্ট করা হয়েছিল নিহত সাদ্দামের মোবাইল ফোন। যদিও ফোনটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। নিহত সাদ্দাম নাদাপ মালদার পুকুরিয়ার বাসিন্দা এবং পেশায় ঠিকাদার ছিলেন।
অভিযুক্ত রহমান তাঁর কাকা এবং মৌমিতা তাঁর কাকিমা। জেরায় মৌমিতা পুলিশকে জানিয়েছে, ঘুমন্ত অবস্থায় সাদ্দামের গলায় ধারালো অস্ত্র বসিয়ে খুন করেছেন তিনি। তদন্তে উঠে এসেছে, গত ১৮ মে রাতে মালদা থেকে সাদ্দামকে স্কুটিতে করে নিজের বাপের বাড়িতে নিয়ে আসেন মৌমিতা।
বাড়িতে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন রহমান। তবে তা জানতেন না সাদ্দাম। সেদিন রাতে মৌমিতার সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন সাদ্দাম। সেই সুযোগে গলায় কোপ বসিয়ে দেয় মৌমিতা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত করা হয়। এরপর দেহ বস্তাবন্দি করে রাখা হয় বাড়ির কুঠুরিতে।
তার পরে সেই দেহ ইট দিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়। রক্তের দাগ চাপা দিতে মেঝেতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ধান। সোমবার সেই ধান সরিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। রান্নাঘর থেকে উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও শিলনোড়া।স্থানীয় বাসিন্দা কাকসার সরকার বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এমন ঘটনা হতে পারে ভাবতেও পারছি না। এখনও আমাদের আতঙ্ক তাড়া করছে।’
চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাহুল সরকার বলেন, ‘পুলিশ নমুনা সংগ্রহ করেছে। ঘটনার জেরে গ্রামে এখনও আতঙ্ক রয়েছে।’ জমি কেনাবেচার ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়িতে আসার কথা ছিল সাদ্দামের। রহস্যজনক ভাবে ইংরেজবাজার শহর থেকেই ওই ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়ে যান।
সিসিটিভির ক্যামেরায় ফুটেজে দেখা যায়, ইংরেজবাজার শহরের রিজেন্ট পার্ক এলাকার একটি বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি।
পুলিশ তাঁর বাইক এবং মৌমিতার ব্যবহার করা স্কুটি উদ্ধার করেছে। ইংরেজবাজার থানার সাব-ইনস্পেক্টর তিমিরবরণ রায় বলেন, ‘পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে। আরও কেউ জড়িত কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে।’