• করোনা থেকে রেহাই মিলছে না শিশুদেরও
    এই সময় | ১০ জুন ২০২৫
  • ফের কোভিড পজ়িটিভ হলো তিন একরত্তি। একজনের বয়স ২৩ মাস, একজনের ১২ এবং তৃতীয় জনের বয়স মাত্র ৩ মাস। প্রত্যেককেই ভর্তি করা হয়েছে পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বাইপাস লাগোয়া আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালেও ৭ ও ৮ বছরের দুই শিশু কোভিড পজ়িটিভ হয়েছে। যদিও তারা বাড়িতেই রয়েছে।

    গত দেড় সপ্তাহের মধ্যে ফুলবাগানের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ-সহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা নিয়ে চিকিৎসাধীন বেশ কিছু শিশু, সদ্যোজাত।

    এর প্রায় ১০ গুণ শিশু কোভিড পজ়িটিভ হয়ে বাড়িতেই থাকছে। এবং সেরেও উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই পর্বে ছোটদের সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা অনেক।

    অথচ এমনটা বরাবর ছিল না। বরং অতিমারী পর্বে আগাগোড়া দেখা গিয়েছে, একমাত্র শিশুরাই সংক্রমণের কবলে পড়ছে না, পড়লেও মৃদু উপসর্গ অথবা উপসর্গহীন থাকছে।

    কিন্তু ২০২২-এ নভেল করোনাভাইরাসের ওমিক্রন প্রজাতি আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই ধীরে ধীরে ছোটদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণের নজির দেখা গিয়েছে। এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রবণতা ক্রমেই বেড়েছে।

    ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-র ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষ জানান, এখন নভেল করোনাভাইরাসের যে প্রজাতি বা উপ–প্রজাতি সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী, সেটি আদতে ওমিক্রনের জেএন.১ উপপ্রজাতি এবং তার পরবর্তী প্রজন্ম এলএফ.৭, এনবি.১.৮.১ এবং এক্সএফজি। তাই ছোটদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষক-চিকিৎসক সৌগত ঘোষ বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস মানবশরীরে সংক্রমণ ঘটায় অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন কনভার্টিং এনজ়াইম টাইপ টু বা সংক্ষেপে এসিই-২ রিসেপ্টর দিয়ে।

    ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন এই রিসেপ্টরকে আঁকড়ে ধরে কোষের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়। বড়দের তুলনায় নাকে যেহেতু ছোটদের এসিই-২ রিসেপ্টর কম থাকে, তাই করোনা ছোটদের হতো না গোড়ার দিকে। কিন্তু পরে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি।’

    তিনি জানান, ওমিক্রনের উপপ্রজাতি এবং তার পরবর্তী প্রজন্মের ভাইরাসে স্পাইক প্রোটিনে জিন মিউিটশনের ফলে এমন পরিবর্তন হয়েছে, যার জেরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটানোর এবং ইমিউনিটিকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। তাই ছোটরাও নিস্তার পাচ্ছে না।

    তবে পিয়ারলেস হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা দে বলছেন, ‘মানুষের শরীরে কোভিডের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ইমিউনিটিকে সহজেই ফাঁকি দিচ্ছে ভাইরাস। সে জন্যই এখন অতি সংক্রামক এই ভাইরাস। তাই ছোটরা সংক্রমিত হলেও মৃদু উপসর্গ কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যাচ্ছে।’

    তিনি জানান, গত পাঁচ দিনে তাঁর অধীনে দু’ জন শিশু করোনা পজ়িটিভ হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের জ্বর, সর্দি, কাশির সমস্যা রয়েছে। সার্ভে পার্কের ৩ মাসের এক শিশু তাঁদের হাসপাতালে একই রকম উপসর্গ নিয়ে ভর্তি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ (পিকু)-এর প্রধান চিকিৎসক সহেলি দাশগুপ্তের অধীনে। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিনেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে শিশুরা।’

    সংযুক্তা জানান, তাঁর আরও তিন জন শিশুরোগী সম্প্রতি কোভিড পজ়িটিভ হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের বয়স ২ বছর, বাড়ি বারাসতে। সকলেরই ধুম জ্বর, সঙ্গে সর্দিকাশি, গা-হাত-পায়ে প্রবল ব্যথা।

    তবে এদের কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। আনন্দপুর ফর্টিস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহাও জানান, তাঁর দুই শিশুরোগী, একজন ৭ ও অন্য জন ৮ বছরের, সম্প্রতি কোভিড পজ়িটিভ হয়েছে। উপসর্গ সকলেরই কাছাকাছি।

    সন্তানের দু’ দিনের বেশি জ্বর কিংবা ধুম জ্বর অথবা মারাত্মক বমি-ডায়ারিয়া থাকলে, অভিভাবকদের অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুর। তিনি বলেন, ‘জ্বর না ছাড়লে চিকিৎসক মনে করলে কোভিড পরীক্ষা করতে বলবেন। টেস্ট হোক বা না হোক, এই ধরনের সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রথাগত চিকিৎসা মোটামুটি একই।’

  • Link to this news (এই সময়)