এই সময়: অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন সার্জারির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আর্থিক প্যাকেজের কথা বলা হয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, প্যাকেজের মধ্যেই চিকিৎসা সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু রোগীকে রিলিজ করার আগে চূড়ান্ত বিলে দেখা যায়, আর্থিক অঙ্ক অনেকটাই বেশি।
হাসপাতালের তরফে নানা যুক্তি দেখানো হয়। কখনও বলা হয়, নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসায় আনুষঙ্গিক খরচের ফলেই বাড়তি বিল। কখনও বলা হয়, ওই রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে আরও কিছু সমস্যা নজরে আসায় বাড়তি টেস্ট করা হয়েছে।
কখনও রোগের জটিলতার যুক্তি দেখানো হয়। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্লেম থাকলেও রোগীর পরিজনকে বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। রাজ্যের কয়েক জন বিধায়কের মেডিক্যাল বিল পরীক্ষা করতে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের এই প্যাকেজ-বহির্ভূত বিলিংয়ের বিষয়টি বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নজরে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন বাড়তি বিল নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করে একাধিক অ্যাভাইজারি প্রকাশ করলেও প্যাকেজ–বহির্ভূত বিলিংয়ের প্রবণতা বন্ধ হয়নি।
এ বার এই প্রবণতা বন্ধে পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টে সংশোধনী আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। বিধানসভার বাদল অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত বিল পেশ হবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর।
প্যাকেজ–বহির্ভূত বিলিংয়ে জরিমানা করা বা মামলা রুজুর বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে সংশোধনীতে। সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হলে প্যাকেজ–বহির্ভূত বিলিংয়ে লাগাম পরানো যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
এই সংশোধনীকে স্বাগত জানাচ্ছে হাসপাতালগুলির সংগঠন। অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘ওভারবিলিং একেবারেই উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর কোমর্বিডিটি কিংবা আচমকা শারীরিক জটিলতার কারণে চিকিৎসার সময়সীমা বেড়ে গেলে কিছু ক্ষেত্রে বিল বাড়তে পারে। তবে সেটাও অনেকাংশে ম্যানেজেবল।’
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা অবশ্য মনে করেন, ‘এই প্যাকেজ সিস্টেমটাই ত্রুটিপূর্ণ। কারণ, একই রোগের চিকিৎসায় ব্যক্তি বিশেষে তারতম্য হয়। আর এই প্যাকেজ সিস্টেমের সুযোগ নেয় কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। নজরদারি প্রয়োজন। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার পরিসর বৃদ্ধিই সেরা বিকল্প।’