জনস্বার্থে বড় সিদ্ধান্ত মমতার, এখনই বাড়িতে বসছে না স্মার্ট মিটার
প্রতিদিন | ১০ জুন ২০২৫
কৃষ্ণকুমার দাস: ফের সাধারণ মানুষের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রে গৃহস্থের বাড়িতে আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে কয়েকদিন ধরে একাধিক জেলা থেকে বিক্ষোভের খবর আসছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানান স্বয়ং বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তারপরই সোমবার গৃহস্থ বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো বন্ধ রাখা হল। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর। যদিও গত কয়েকমাসে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং টেলি কমিউনিকেশন টাওয়ারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলভাবে স্মার্ট মিটার বসিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম।
দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো একাধিক মহানগর-শহরের মতো আধুনিক প্রযুক্তির এই মিটার সর্বত্র চালু হলে বিদ্যুতের খরচ অনেকটাই কম এবং নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বস্তুত এই কারণে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে পরীক্ষামূলকভাবে রাজ্যের তিন-চারটি জেলায় গৃহস্থের বাড়িতেও স্মার্ট মিটার বসানো হয়। কিন্তু একাধিক এলাকায় এই মিটার নিয়ে নানা অভিযোগ আসায় প্রয়োজন মোতাবেক পদক্ষেপ করার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম এলাকায় গৃহস্থের বাড়িতে আপাতত স্মার্ট মিটার লাগানো বন্ধ রাখা হল বলে সোমবার বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
স্মার্ট মিটার চালু হলে রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কী কী বাড়তি সুবিধা পাবেন তা নিয়ে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা নানা তথ্য জানিয়েছেন। প্রিপেড মোবাইল রিচার্জ করার মতোই স্মার্ট মিটারের ব্যবহার বলে গ্রাহকদের নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, সাধারণ মিটারে এতদিন যে টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট ছিল, সেটাও স্মার্ট মিটারে শুরুতেই ব্যবহার করতে পারবেন। একই সঙ্গে যদি প্রিপেড টাকা শেষ হয়ে যায় তা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁদের আরও বক্তব্য, আরও ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন স্মার্ট মিটারের গ্রাহকরা। তাই স্মার্ট মিটারে বেশি বিল আসবে বলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা ভ্রান্ত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক নয় বলে দাবি বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের।
উল্লেখ্য, দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, বাঁকুড়ার মতো দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কিছু জোনে গৃহস্থদের বাড়িতে এই স্মার্ট মিটার বসেছিল। বিষয়টি নিয়ে একাধিক ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার দপ্তরে বিক্ষোভও হয়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে তড়িঘড়ি রাজ্য সরকার আপাতত স্মার্ট মিটারে ‘না’ জানিয়ে দিল। এক প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, এই স্মার্ট মিটার ব্যবহারের সব চেয়ে বড় সুবিধা হল, বিলগুলিকে আরও নির্ভুল ও স্বচ্ছ হিসাবে দিতে পারবেন গৃহস্থরা।
শুধু তাই নয়, মোবাইল সেটিংয়ের মতো গ্রাহকরা নিজেরা মিটার সেটিং করে নিলে প্রতি আধ ঘণ্টা থেকে শুরু করে দৈনিক বিদ্যুৎ খরচের হিসাবও মেসেজের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। দ্বিতীয় যে বিষয়টি হল, স্মার্ট মিটারের সঙ্গে একটি ইন হাউস ডিসপ্লে মনিটর বোর্ড থাকছে, যা প্রতি মুহূর্তে বাড়িতে শক্তির ব্যবহার কতটা হচ্ছে তা জানিয়ে দেবে। স্মার্ট মিটারের তৃতীয় তথ্য হল, গ্রাহক যখন বাড়িতে থাকবেন না তখন মোবাইলের মাধ্যমে গোটা পরিষেবা বন্ধ রাখতে পারবেন। এতে করে একদিকে ফাঁকা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত দুর্ঘটনা যেমন প্রতিহত করা যাবে, তেমনই চুরি করে কেউ গৃহস্থহীন বাড়ির বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে না।