চিপসের প্যাকেট চুরির ‘অপবাদে’ বালকের মৃত্যু, ১৬ দিন পর গ্রেপ্তার সিভিক ভলান্টিয়ার
প্রতিদিন | ১০ জুন ২০২৫
সৈকত মাইতি, তমলুক: চিপসের প্যাকেট চুরির ‘অপবাদে’ বালকের মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। ঘটনার অভিযোগ দায়েরের প্রায় ১৬ দিন পর শুভঙ্কর দীক্ষিতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তদন্তে নেমেছিল পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। তবে এখনও এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামপদ ভূঁইয়া ওরফে জামাই পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি জারি রেখেছে পুলিশ।
গতকাল, রবিবার অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ধৃতকে তমলুক আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ঘটনায় স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ধৃতের স্ত্রী। তিনি বলেন, “আমার স্বামী কোনও অপরাধ করেনি। কিছু কুচক্রী লোক ইচ্ছে করে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।” ঘটনার দিন উপস্থিত চার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই নাবালকের সেই লেখার সঙ্গে অন্য খাতার হাতের লেখা যাচাই করার কাজ চলছে। সেসব কোশ্চেন ডকুমেন্ট এক্সামিনেশন ব্যুরো(QDEB) দপ্তরে পাঠাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে পুলিশ। একই সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ এবং মৃত ছাত্রের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া আগাছানাশক বিষের বোতলটিও বাজেয়াপ্ত করে সেগুলি ফরেনসিক পরীক্ষায় তৎপর তদন্তকারীরা।
ঘটনার প্রায় ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও অধরা শ্যামপদ ভূঁইয়া ওরফে জামাই। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ওই দিন গল্প ফেঁদে চোর ‘অপবাদ’ রটিয়ে এই শ্যামপদ এলাকায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল! প্রত্যক্ষদর্শী রানু রানা বলেন, “ঘটনার পর ছেলেটি এমনিতেই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। চুরি না করলেও দোকানের সামনে থেকে কুড়িয়ে পাওয়া চিপসের প্যাকেটগুলি রাস্তার পাশে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিল। আর তখনই ধরা পড়ে গিয়ে নিজেই ভুল হয়েছে স্বীকার করে কান ধরে উঠবস করেছিল।” অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী সদানন্দ রানার দাবি, “সামান্য কয়েকটা চিপসের প্যাকেটের জন্য ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বালকটির পিছনে ধাওয়া করা ঠিক হয়নি। তাতেই ঘাবড়ে গিয়ে অপমানিত বোধ করে পালাবার চেষ্টা করছিল বালকটি।” এ বিষয়ে পাঁশকুড়া থানার আইসি সমর দে বলেন, “যেহেতু ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আগেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হল।”
গত মাসে পাঁশকুড়ায় চিপসের প্যাকেট চুরির অভিযোগে এক নাবালককে চোর ‘অপবাদ’ দেওয়া হয়েছিল। সকলের সামনে কান ধরে উঠবস করানো হয় বলে অভিযোগ। তার মাও প্রকাশ্যেই ছেলের গায়ে হাত তুলেছিলেন। এরপর অপমানে কীটনাশক খাওয়ার কারণে ওই নাবালক মারা যায়। ঘর থেকে পাওয়া যায়, ‘আমি চুরি করিনি মা’ লেখা। যদিও পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই বালক চিপসের প্যাকেট চুরি করেনি।