নদীগুলিতে আগের মতো সারাবছর জল থাকছে না, ব্যাপক প্রভাব জীববৈচিত্রে
বর্তমান | ১০ জুন ২০২৫
সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গ মানেই জল, জঙ্গল, নদী। বিস্তীর্ণ সবুজ চায়ের বাগান। শ্বাপদসংকুল অরণ্যে ঘেরা এক দেশ। কিন্তু একথা ভাবার সময় এসেছে যে, আগামী ৫০ বা ১০০ বছর পর এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা অঞ্চলের পরিণতি কি হবে? আদৌ কি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলের সবুজ গালিচা টিকে থাকবে? আর তা যদি না থাকে, তাহলে অবস্থাটা ঠিক কি দাঁড়াবে? উত্তরবঙ্গের নদীতে জল নেই মানে কিন্তু অরণ্য নেই, চা বাগান নেই, বন্যপ্রাণহীন এক রুখাসুখা ভূমি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে বৃষ্টিপাত হয়। হিমবাহ গলার ফলে সংযুক্ত নদীগুলিতে জল বাড়ে প্রাক মরশুমে। অর্থাৎ, মার্চ-মে মাসে। সেই সময় দেখা দেয় বন্যা, নদী ভাঙন, ধসের মতো বিপর্যয়। কিন্তু তারপর? বছরের বাকি সময় নদী শুকিয়ে কাঠ।
সমস্ত জীবকূলের মতো নদীরও জীবদ্দশা রয়েছে। তার জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বহু নদীই এখন তাদের ‘জার্নি’র চতুর্থ বা পঞ্চম পর্যায়ে রয়েছে। অনেক নদীতেই আর আগের মতো সারা বছর জল থাকছে না। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্রের উপর। শুধু তাই নয়, এই এলাকার নদীতে জল না থাকলে তা মৌসুমী বায়ুর উপরেও প্রভাব বিস্তার করবে। যা আবহাওয়া পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে। খরার পরিমাণ বাড়বে।
জেমু হিমবাহ গত ৫০ বছরে প্রায় ৩০ মিটার পিছিয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এছাড়াও রয়েছে রাথুং হিমবাহ সহ অসংখ্য হিমবাহ। এক একটি নদীতে বিভিন্ন হিমবাহের জল প্রবাহিত হয়ে আসে। ট্রান্স হিমালয়ান পার্টে এই হিমবাহগুলি রয়েছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় দুই লক্ষ হিমবাহ রয়েছে। তারমধ্যে বহু হিমবাহ হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত। যা আবার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। আমাদের এদিকে নেপাল, চীন, তিব্বতে হিমবাহ রয়েছে। রাথুং হিমবাহ থেকে দক্ষিণ তিব্বতের চুম্বে ভ্যালি থেকে বয়ে এসেছে তোর্সা নদী। কাব্লুডুন, জর্জ সে সহ বহু হিমবাহ রয়েছে আপার সিকিমে। কোনও কোনও লেকে এই হিমবাহ গলা জল জমা হয়। সেখান থেকেও কোনও কোনও নদীর জন্ম হয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীগুলিতে জল কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু এই হিমবাহ গলে যাওয়া। এছাড়াও অপেক্ষাকৃত সমতলে নদীর গতিপথ নানা জায়গায় রুদ্ধ হচ্ছে। এসবের ফলেও নদীর ক্ষতি হচ্ছে।
কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শশাঙ্কশেখর গায়েন বলেন, উত্তরবঙ্গের ৬৯টি নদী নিত্যবহ। সারা বছর এই নদীগুলিতে জল প্রবাহিত হয়। সেগুলি মূলত হিমালয়ের বরফ গলা জলে পুষ্ট। এছাড়াও বর্ষায় এইসব নদীতে জল বাড়ে। তবে অতি যান্ত্রিকতা, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ গলে গলে পিছিয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে হিমবাহের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২ শতাংশ। এখন সেটি প্রায় তিন শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। হিমবাহ শেষ হয়ে যাওয়া মানে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিও শুকিয়ে যাবে। তার প্রভাব এখানে সর্বব্যাপী হবে। জল নেই ডিমা নদীতে। - ফাইল চিত্র।