দেবব্রত ঘোষ: কাজের টোপ দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের তরুণীকে প্রায় পাঁচ মাস হাওড়ার ডোমজুড়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালানোয় অভিযুক্ত ‘ব্যবসায়ী’ মা-ছেলের সন্ধান মেলেনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘নির্যাতিতা।’ এর মধ্যে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করছে জাতীয় মহিলা কমিশন। অভিযুক্ত শ্বেতা খান এবং পুত্র আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহর ক্রমশ বাড়ছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন একের পর এক ‘প্রতারিত’ ব্যক্তি।
ফুলটুসি ওরফে শ্বেতা খানের জীবন:
এবার এই সোদপুর কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ফুলটুসি ওরফে শ্বেতা খানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তার প্রাক্তন স্বামী মহম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম। ওই ব্যক্তির অভিযোগ টাকা এবং সম্পত্তির লোভে তাকে বিয়ে করেছিল ওই মহিলা। তারপর তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের মারধর করত। স্বামী থাকলেও বাড়িতে অন্য পুরুষ বন্ধুদের ডেকে তাদের সঙ্গে ফুর্তি করত। এমনকি হাসপাতালে শ্বশুর ভর্তি অবস্থায় বাড়ির দলিল নিয়ে গিয়ে তার নামে সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়। প্রাক্তন স্বামীর অভিযোগ ওই মহিলা তাদের গোটা পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে।
শ্বেতার স্বামী মহম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম
হাওড়ার মঙ্গলাহাট এবং মেটিয়াবুরুজ হাটের জামা কাপড়ের বড় ব্যবসায়িক ছিলেন মহম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম। ২০০২ সালে মহসিনা খাতুন ওরফে ফুলটুসি র সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তান আরিয়ান খান এবং ইসিকা খান হয়। কিন্তু বিয়ে এবং সন্তানের জন্মানোর পর থেকেই টাকা এবং সম্পত্তির লোভে স্বামীর উপর অত্যাচার শুরু করে বলে অভিযোগ। তার স্বামীর আরও অভিযোগ, ফুলটুসি মোবাইল ফোনে বাইরের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে সব সময় ব্যস্ত থাকতো। এমনকি তাদেরকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ফুর্তি করত। প্রতিবাদ করলে বাড়ির লোকেদের মারধর করতো। সে তার বোনকে নাবালক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়। সে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তার আরও অভিযোগ বাড়ি যত মূল্যবান আসবাব বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চলে যায়। এইসব নিয়ে তিনি প্রতিবাদ করলে তাকে এবং তার মাকে মারধর করত। এমনকি সে স্বামীর মুখে থুতু ছিটিয়ে দেয়।
ঈশিকা খানের আত্মহত্যা
এইসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মহম্মদ সৈয়দ মরসোলিম ২০০৮ সালে বাঁকড়ার বাড়ি ছেড়ে চলে যান হুগলির ফুরফুরা শরীফে। এখন সেখানেই তিনি থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে তার ধর্মীয় মতে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এদিন তিনি তার মেয়ে ঈশিকা খানের আত্মহত্যার জন্য তার প্রাক্তন স্ত্রীকে দায়ী করেছেন। তার স্পষ্ট অভিযোগ ছেলে আরিয়ান খানকে বিপথে চালুর জন্য দায়ী তার মা। সেই তাকে জোর করে নানা নোংরা কাজে জড়িয়ে দেয়।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর ফকির পাড়ার প্রাক্তন স্বামীর বিশাল সম্পত্তি হাতিয়ে নেয় ফুলটুসি। ওই সম্পত্তিতে বর্তমানে ভাড়া বসানো আছে। সে সমস্ত বাড়ি ভাড়া নিজের নামে তোলে।
শ্বেতা এবং আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
উল্লেখ্য শ্বেতা এবং আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রোডাকশন হাউস খুলে তাঁরা ছবিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করতেন অল্পবয়সিদের। কিন্তু মা-ছেলে পরিচালনা এবং প্রযোজনা করতেন পর্ন ভিডিয়োর। এমনকি, অনেককে জোর করে দেহব্যবসায় নামান বলেও অভিযোগ। সোদপুরের নির্যাতিতার সঙ্গে তেমনটাই হতে যাচ্ছিল বলে তাঁর মায়ের দাবি। ওই মহিলা জানিয়েছেন, পরিবারের হাল ফেরাতে মেয়ের কাজের দরকার ছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়ের সঙ্গে সমাজমাধ্যমে পরিচয় হয় আরিয়ানের। ওই যুবক জানান, তাঁদের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা রয়েছে। সেখানে কাজ মিলবে।
সোদপুরের তরুণী
অভিযোগ, ওই ‘টোপ’ দিয়ে ডোমজুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোদপুরের তরুণীকে। তাঁকে কাজ দেওয়া হয় একটি পানশালায়। তরুণীর মায়ের দাবি, ‘‘মেয়েকে দিয়ে খারাপ খারাপ কাজ করাতে চাইত ওরা (শ্বেতা ও আরিয়ান)। ও রাজি না হওয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন চলত।’’ শুধু আটকে রাখাই নয়, তরুণীর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। পরিবারের দাবি, মেয়েকে রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। শুক্রবার কোনও ভাবে হাওড়ার ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোদপুরে পৌঁছোন তরুণী। পাঁচ মাস পরে মেয়েকে ওই ভাবে দেখে চমকে যান বাড়ির লোকেরা। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।