এখনও খোঁজ নেই সোদপুর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ‘ফুলটুসি’ শ্বেতা খান ও তাঁর ছেলে আরিয়ান খানের। তবে মা-ছেলে এলাকা ছাড়া হতেই সোডার মতো ভুসভুসিয়ে উঠে আসছে অভিযোগ। শ্বেতার সঙ্গে ‘প্রভাবশালী’ তকমা সেঁটেছেন পাড়ার লোকেরা। মায়ের প্রশ্রয়ে ছেলেরও দাপটের অভিযোগ বাঁকড়ার বাসিন্দাদের। এ বার মুখ খুললেন শ্বেতার প্রাক্তন স্বামী মহম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম। বিস্ফোরক সব অভিযোগ তাঁর। মোরসেলিম-শ্বেতার মেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মোরসেলিমের দাবি, ফুলটুসি বেগম ওরফে শ্বেতা খানের কুকীর্তির কারণেই নাবালিকা মেয়েকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল।
হাওড়ার মঙ্গলাহাট এবং মেটিয়াবুরুজ হাটে জামা কাপড়ের ব্যবসা করতেন মহম্মদ সৈয়দ মোরসেলিম। তিনি জানান, ২০০২ সালে মহসিনা খাতুন ওরফে ফুলটুসি ওরফে শ্বেতার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তান আরিয়ান খান ও ঈশিকা খান।
মোরসেলিমের অভিযোগ, টাকা ও সম্পত্তি দেখে তাঁকে বিয়ে করেন শ্বেতা। সন্তানদের জন্মের পরই নানা ভাবে তাঁর উপর জোরজুলুম খাটাতেন শ্বেতা। মারধর করতেন, মুখে থুতু ছিটিয়ে দিতেন। এমনকী তাঁর পরিবারের লোকজনের উপরও অত্যাচার চালাতেন শ্বেতা।
শ্বেতার প্রাক্তন স্বামীর আরও অভিযোগ, সর্বক্ষণ ফোনে ব্যস্ত থাকতেন শ্বেতা। বাড়িতে যখন তখন অচেনা পুরুষ এসে হাজির হতো। এমনকী শ্বশুর অসুস্থ থাকার সময়ে, হাসপাতালে গিয়ে জোর জবরদস্তি করে সম্পত্তিও নিজের নামে করে নেন বলে অভিযোগ মোরসেলিমের।
মোরসেলিম জানান, যত দিন গিয়েছে, শ্বেতার অত্যাচার ক্রমাগত বেড়েছে। বাধ্য হয়ে ২০০৮ সালে বাঁকড়ার বাড়ি ছেড়ে হুগলির ফুরফুরা শরিফে চলে যান তিনি। এখন সেখানেই থাকেন বলে জানান। মোরসেলিমের বক্তব্য, মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল। ছেলে আরিয়ানকেও হাতে ধরে ভুল পথে চালিয়েছেন শ্বেতা, দাবি বাবার।
ফকিরপাড়ায় মোরসেলিমের সম্পত্তি ছিল। শ্বেতা তাও নিয়ে নেন বলে অভিযোগ। সেখানে এখন ভাড়া বসানো রয়েছে। ভাড়ার টাকাও শ্বেতা নেন। কিন্তু শ্বেতা কী ভাবে এত ক্ষমতা পেলেন? এলাকার লোকজনের দাবি, শ্বেতার সঙ্গে একাধিক নেতার খাস-যোগ। বিভিন্ন সময়ে মিটিং মিছিলে গিয়েছেন, ছবিও রয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে ছবি রয়েছে শ্বেতার। যদিও অরূপ রায় এ প্রসঙ্গে জানান, ব্যক্তিগত ভাবে এরকম কাউকে তিনি চেনেন না। কোনও দিন দেখেননি। তবে মিটিং-মিছিলে এসে কেউ ছবি তুলে, পরে নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে চাইলে, সেটা ঠিক নয়। দলে এমন কেউ থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের এক তরুণীকে জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে শ্বেতা ও আরিয়ানের নামে। পরে অভিযোগ আরও জোরালো হয়। অভিযোগ, ‘সফ্ট পর্ন’ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মা-ছেলে। সোদপুরের তরুণীকে বাগে আনতে না পেরে গত ৬ মাস ধরে নানা ভাবে অত্যাচার করেন। হাওড়ার বাঁকড়ায় শ্বেতাদের ফ্ল্যাটে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি সেখান থেকে পালিয়ে সোদপুরের বাড়িতে যান ওই তরুণী। এর পরই খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে একেবারে কেউটে বেরিয়ে আসছে এ বার।