ছেলে CRPF কর্মী, রাস্তার ধারে পড়ে মা! সন্তানদের দাবি, ‘কারও সঙ্গে মানাতে পারেন না’
প্রতিদিন | ০৮ জুন ২০২৫
রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: ছেলে সিআরপিএফ কর্মী অথচ বৃদ্ধা মায়ের রাত কাটছে বিশ্রামাগারে। অভিযোগ, বউমা তাঁর দেখাশোনা করেন না। ঘটনা তেহট্ট থানার বেতাই এলাকার। এই ঘটনায় হতবাক সকলেই। যদিও বৃদ্ধার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পরিবার। সন্তানদের দাবি, বৃদ্ধা কারও বাড়িতে থাকতে পারেন না। কারওর সঙ্গে মানাতে পারেন না।
বৃদ্ধার নাম কমলা সরকার। বর্তমানে ডঃ বি আর আম্বেদকর কলেজের সামনে বিশ্রামাগারে দিন কাটছে। বৃদ্ধার কথায়, তাঁর এক ছেলে, পাঁচ মেয়ে। মেয়েদের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে সিআরপিএফ জওয়ান। বৃদ্ধার অভিযোগ, কেউ তাঁর খোঁজ রাখছে না। কোনও বাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে বর্তমান ঠিকানা যাত্রী প্রতীক্ষালয়। স্থানীয় মানুষ তাঁকে খাবার দিচ্ছে। অসহায় বৃদ্ধার আবেদন, তাঁকে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
কমলা সরকারের বাড়ি ছিল বেতাই লালবাজার গ্রামে। স্বামী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার ছিল। পাঁচ মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে সেনাবাহিনীর জওয়ান। বৃদ্ধা বলেন, “কারওর কাছে আমি ঠাঁই পাই না। ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরি করে বলে বাইরে থাকে। বউমা আমাকে তাঁদের কাছে রাখতে রাজি না। তাই দুদিন ধরে এই বিশ্রামাগারে আছি।”
যদিও বৃদ্ধার দাবি অস্বীকার করে মেয়ে কানন বিশ্বাস বলেন, “ভাই সিআরপিএফে চাকরি করে। ভাই প্রত্যেক মাসে মায়ের অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা পাঠায়। আমরা পাঁচ বোন, এক ভাই। আমাদের মধ্যে কারো বাড়িতে গিয়ে মা মানিয়ে দিয়ে নিতে পারেন না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুচ্ছ কারনে বাড়িতে অশান্তি করে প্রত্যেকবারে কোথাও না কোথাও চলে যায়।” তিনি আরও জানান, “লালবাজার গ্রামের বাড়ির জায়গাটাও উনি নিজে হাতে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রথম থেকে মা আমাদের ভাই-বোনদের কাছে থাকতে রাজি না, এখন বয়সজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি কমেছে, কানে ঠিকমতো শুনতে পায় না, তারপরেও কারো বাড়িতে থাকবেও না। আর আমাদের নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়, এবার জোর করে বাড়িতে নিয়ে এসে আটকে রেখে দেব, মায়ের জন্য লোক সমাজে মুখ দেখানো দায় হয়ে পড়েছে।”
প্রতিবেশীরা জানান, ওই মহিলা একগুঁয়ে স্বভাবের। পরিবারে কারও সাথে খাপ খায় না। ওঁর ব্যবহারে সন্তানরা তিতিবিরক্ত। কলেজের সামনের ব্যবসায়ী নারায়ণ পাত্র বলেন, “দু’দিন ধরে মহিলা ওই বিশ্রামাগারে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খাবার ব্যবস্থা করলেও চিরদিন তো এইভাবে চলতে পারে না। বয়স্ক মহিলার ছেলে সন্তান যেখানে থাকুক না কেন মানবিক দিক বিবেচনা করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করছি।” ছেলে কলকাতার বাসিন্দা সিআরপিএফ কর্মী পবিত্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।