ভারত-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে নীরব কেন্দ্র, ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলেছে ডুয়ার্সে
বর্তমান | ০৩ জুন ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: ভারত-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে রাজ্য সরকার অনেক আগেই বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে। কিন্তু এনিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই মোদি সরকারের। ফলে ফি বছরের মতো এবারও বর্ষা শুরু হতে না হতেই ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীর জলের দাপটে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে ডুয়ার্সে। ভাঙছে বাড়িঘর, রাস্তা। তলিয়ে যাচ্ছে চা বাগান, চাষের জমি।
গত ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলিপুরদুয়ারে সভা করতে এলেও ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গঠন নিয়ে একটি কথাও বলেননি। ফলে যারপর নাই ক্ষুব্ধ ডুয়ার্সের বাসিন্দারা। আলিপুরদুয়ার জেলাবাসীর ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে এনিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়ছে না রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবিরও। ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে কানাঘুষো শুরু হয়েছে, ভারত-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে কেন্দ্রের ‘নীরবতা’ বিধানসভা ভোটের আগে ডুয়ার্সে বিপাকে ফেলতে পারে দলকে। এই পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে মরিয়া আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা। সোমবার মনোজ বলেন, ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলি যেভাবে ডুয়ার্সের বাড়িঘর, চা বাগান গিলছে, তাতে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন দরকার। কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই কথা বলব।
এদিকে, সিকিমের পর্যটনকে গুরুত্ব দিলেও পাহাড়-ডুয়ার্সের ট্যুরিজম নিয়ে কেন্দ্র কিছুই ভাবছে না বলে অভিযোগ উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এনিয়ে ইতিমধ্যেই অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। সংগঠনের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, সিকিম ও পাহাড়-ডুয়ার্সের পর্যটন ভাত-ডাল-সব্জির মতো। অর্থাৎ একে অন্যের পরিপূরক। কেন্দ্র সিকিমের পর্যটনের প্রসারে যেমন ভাবছে, একইভাবে পাহাড়-ডুয়ার্সের ট্যুরিজম নিয়েও ভাবা দরকার তাদের। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান, মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি, সিঞ্চেল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। দার্জিলিং-হিমালয়ান রেল অর্থাৎ টয় ট্রেন নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে রোপওয়ের মাধ্যমে সিকিমকে যুক্ত করা যেতে পারে। এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে ট্যুরিজম নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি পার্থসারথি রায় বলেন, আলিপুরদুয়ার উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার। কাছেই ভুটান। ফলে এখানে ট্যুরিজম হাব হতে পারে। রাজ্য ডুয়ার্সের পর্যটনের প্রসারে সচেষ্ট। অথচ কেন্দ্র পুরোপুরি উদাসীন। এনিয়ে আমরা কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রকে চিঠিও দিয়েছি। লাভ হয়নি।
তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, কালজানি, মুজনাই সহ ভুটান পাহাড় থেকে বহু নদী নেমে এসেছে ডুয়ার্সে। ফি বছর এসব নদীর জলে প্লাবিত হয় আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্তমানে ভারত-ভুটান জয়েন্ট গ্রুপ অব এক্সপার্ট কমিটি রয়েছে। কিন্তু যৌথ নদী কমিশন না থাকায় বহু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছেন সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্বের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। নিজস্ব চিত্র