• জুয়ায় টাকা খুইয়ে কিডনি বিক্রি! তবু শেষরক্ষা হল না, আর্থিক প্রতারণার দায়ে ধরা পড়লেন মুর্শিদাবাদের যুবক
    আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৫
  • দাদার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার করে অনলাইনে জুয়া খেলতেন। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা জিতেও ছিলেন! কিন্তু সুখ বেশি দিন সয়নি। পরবর্তী কালে সব টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। আবার দাদার কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য পরিবারের তরফ থেকেও চাপ আসছিল। শেষমেশ নিজের একটি কিডনিই বিক্রি করে বসলেন মুর্শিদাবাদের যুবক। তার পরেও আর্থিক প্রতারণার দায়ে ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে।

    মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা এলাকার পরহর সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম রৌশন জামান। রৌশন এক ডেলিভারি সংস্থার কর্মী। কর্মসূত্রে বেশ কিছু দিন ধরে বহরমপুরের একটি মেসে ভাড়া থাকছিলেন তিনি। রবিবার সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারের সদস্য ছাড়াও বাইরের একাধিক লোকের থেকেও কয়েক লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন রৌশন। তার পর অনলাইন জুয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা খোয়া যায় তাঁর। এর পরেই টাকা শোধ করতে পরিবারের অজান্তে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করে দেন রৌশন। তাতেও লাভ না হলে প্রতারণার কৌশল নেন।

    রৌশনের দাদা পশু চিকিৎসক। আর এক ভাই ডাক বিভাগের সরকারি কর্মী। রৌশন নিজেও একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেই সময় থেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। প্রথম বছরে ১০ লক্ষ টাকাও জিতেছিলেন রৌশন। কিন্তু তার পর থেকে হারতে শুরু করেন তিনি। তত দিনে অবশ্য ওই যুবকের জুয়া খেলার অভ্যাস আসক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সেই নেশাতেই বুঁদ হয়ে পরিবারের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে ফেলেন রৌশন। পরিবার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে শুরু হয় ঋণ নেওয়া। সেই ঋণ শোধ করতে পাঁচ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় নিজের কিডনিও বিক্রি করে দেন তিনি। তার পরেও টাকা শোধ না হলে শেষমেশ প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। অভিযোগ, কয়েক দিন আগে বহরমপুরের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এটিএম কার্ড ও মোবাইলের সিম কার্ড হাতিয়ে নিয়ে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করেছিলেন রৌশন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু হয়েছে।

    অভিযুক্ত রৌশনের কথায়, ‘‘আমি আগে ১০ লক্ষ টাকা জিতেছিলাম। কিন্তু তার পর সব টাকা হেরে যাই। বাড়ি থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম। বাড়িতে টাকার জন্য দাদা অশান্তি করছিল। খানিকটা অভিমান থেকেই হঠকারী ভাবে কিডনি বিক্রি করে দিই।’’ ঘটনার কথা শুনে হতভম্ব পুলিশও। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সানি রাজ বলেন, ‘‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনলাইন গেমের আসক্তিতে তিনি কিডনি বিক্রির কথা জানিয়েছেন। গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)