করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় তিন বছর আগে তৈরি করোনা টিকাগুলির পরিমার্জন করে নতুন টিকা বানানোর প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টি মানবদেহে তৈরি হওয়া বিশেষ ধরনের ‘স্মৃতিকোষ’ বা মেমরি সেলের কার্যকারিতার উপরে নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন কলকাতায় স্থিত কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ ইন ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশনস’ বা ‘নিরবি’-র বিশেষজ্ঞরা। সেই কাজই আপাতত শুরু করতে চলেছেন তাঁরা।
প্রথম বার করোনা সংক্রমণের পরে ভারতে জনসাধারণকে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ এবং অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর টিকা ‘কোভিশিল্ড’ দেওয়া হয়েছিল। এর পরে, ২০২৩ সাল থেকে ‘নিরবি’-র বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান, টিকা নেওয়ার পরে কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দেহের রক্তের শ্বেতকণিকায় এক ধরনের ‘স্মৃতিকোষ’ বা মেমরি সেল তৈরি হয়েছে।
টিকার প্রভাবে মানবদেহে তৈরি হওয়া ‘অ্যান্টিবডি’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাযুক্ত প্রোটিনের প্রভাব কেটে যাওয়ার পরেও করোনা টিকার স্মৃতি এবং করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের স্মৃতি নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছে এই স্মৃতিকোষগুলি। ফের কখনও দেহে করোনার সংক্রমণ হলে এই স্মৃতিকোষগুলি অতি দ্রুত করোনাভাইরাসের ‘এপিটোপ’ বা অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে।
‘নিরবি’-র অধিকর্তা শান্তসবুজ দাসের কথায়, “যাঁদের রক্তে এই স্মৃতিকোষ তৈরি হয়েছে, তাঁদের নতুন করে আর টিকা দেওয়ার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। আবার যদি দেখা যায় করোনার একাধিক নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা উপ-প্রজাতিগুলির অ্যান্টিজেনকে এই স্মৃতিকোষগুলি চিহ্নিত করতে পারছে এবং দেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করতে পারছে, তা হলে করোনার টিকাগুলির পরিমার্জনও প্রয়োজন হবে না। ফলে আমরা এখন এই স্মৃতিকোষগুলির কার্যকারিতার উপর নজর রাখছি।”
ভারতে করোনা টিকার তিনটি ডোজ় মূলত ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল। টিকা নিয়েছেন এমন প্রায় ২০০ জন চিকিৎসক, নার্স, ল্যাবরেটরি কর্মী, চিকিৎসাকর্মীর মধ্যে ‘নিরবি’র এই গবেষণা শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে, যা এখনও চলছে। যাঁদের মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয়েছে তাঁরা মূলত কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং আমদাবাদের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে ‘কোভিশিল্ড’ নেওয়া লোকের সংখ্যাই বেশি।
গবেষকদের মতে, অল্পবয়স্কদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের রক্তে এই স্মৃতিকোষ কম সংখ্যায় তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, করোনা বাড়লেও চরিত্রগত দিক দিয়ে তা এখনও সাধারণ স্তরে রয়েছে। ফলে ভয়ের কারণ নেই। গণ-টিকাকরণেরও প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে তেমন প্রয়োজনেও মানবদেহে ইতিমধ্যে তৈরি স্মৃতিকোষগুলি করোনার নতুন প্রজাতিগুলির উপরে কার্যকর হলে টিকার পরিমার্জনার তেমন প্রয়োজন হবে না। তাতে সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয়ও হবে।