প্রসেনজিত্ মালাকার: বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী ও লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘিরে উত্তাল শান্তিনিকেতন। পৌরসভার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফের শুরু হয়েছে ভাঙচুরের কাজ। রবিবার সকালে প্রায় ৯টা নাগাদ দেখা যায়, একটি আর্ট অর্ডার ঢুকিয়ে পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘আবাস’ নামক বাড়িটি। অথচ বাড়ির মূল গেটে এখনও বোলপুর পৌরসভার দেওয়া তালা ঝুলছে। প্রশ্ন উঠছে, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চালু হল এই ভাঙার কাজ?
এর আগে প্রথম দফায় ভাঙচুর শুরুর সময় বোলপুর পৌরসভা হস্তক্ষেপ করে গেটে তালা মেরে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এবার সেই নির্দেশিকা কার্যত অগ্রাহ্য করেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বাড়িটি। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ ফোন ধরেননি।
এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শান্তিনিকেতনের ইতিহাস, আবেগ ও শিল্পচর্চার দীর্ঘ পরম্পরা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো, এবং বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। বহু সময় ধরে এই বাড়িতে থেকেছেন অবনীন্দ্রনাথ নিজেও। তাঁর স্মরণেই এলাকার নাম রাখা হয়েছিল ‘অবনপল্লী’।
শান্তিনিকেতনের বহু অধ্যাপক, আশ্রমিক ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, "একজন জাতীয় স্তরের শিল্পীর স্মৃতি রক্ষায় যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তাহলে শান্তিনিকেতনের ভবিষ্যৎ কোথায়?" জানা গিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ির জায়গায় ভবিষ্যতে বহুতল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে আশঙ্কা, কবির আদর্শে গড়ে ওঠা শান্তিনিকেতন কি তবে ঠিকাদার ও জমি হাঙরদের কবলে পড়তে চলেছে?
প্রসঙ্গত, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন শুধু চিত্রশিল্পী নন, একাধারে লেখকও। তাঁর সৃষ্ট ‘রাজকাহিনী’, ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘নালক’, ‘ভারত শিল্প’, ‘শকুন্তলা’ প্রভৃতি গ্রন্থ আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, শিল্পচর্চা, এবং শান্তিনিকেতনের নানা মুহূর্ত ইতিহাস হয়ে আছে অসংখ্য লেখনীতে।
এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে শুধুই একখণ্ড স্থাপত্য নয়, মুছে যাচ্ছে ইতিহাস, মুছে যাচ্ছে আবেগ—এই ভাবনায় শোকস্তব্ধ শান্তিনিকেতন। প্রশাসনিক নীরবতা এবং তৎপরতার অভাবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি আজ শুধুই অতীত।