• দুই সিভিকের প্রয়াসে ৫ টাকাতেও নতুন জামা শিশুদের
    এই সময় | ০২ জুন ২০২৫
  • অশীন বিশ্বাস ■ নিমতা

    শহরের কোলাহলের মাঝে নিমতার বিরাটি তেঁতুলতলায় শান্ত রাস্তার পাশে একটা ছোট্ট দোকান। ভিড়ের থেকে একটু আড়ালে থাকা দোকানটা প্রথমে চোখেও পড়ে না। নাম 'গরিব বাজার'। নামটাই যেন বলে দেয়, এটা আর পাঁচটা দোকানের চেয়ে একটু আলাদা। দোকানে পাওয়া যায় ৬ মাস থেকে ১০ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড়। জিনিসপত্রের দাম? মাত্র ৫ থেকে ৩০ টাকা!

    দোকানের মালিক অমিত সরকার পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। নিমতা থানা এলাকায় কর্মরত অমিতের মাথায় টুপি, গায়ে সরকারি জ্যাকেট, আর চোখে এক ধরনের মমতা মেশানো দৃঢ়তা। ডিউটির পাশাপাশি মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন তিনি। যা শুধু দান নয়, সম্মানের সঙ্গে সাহায্য। তাঁর উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি ভিডিয়ো ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে পেজে আপলোডও করা হয়েছে।

    বিরাটি, বিশরপাড়া এলাকায় একাধিক গেঞ্জি কারখানায় গিয়ে অল্প দামে কাপড় কিনে নিয়ে এসে অমিত ও তাঁর স্ত্রী মধুমিতা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সেলাই করে জামা-কাপড় তৈরি করে তা বিক্রি করেন ওই দোকানে। দোকান খোলা থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। অমিতের স্ত্রী মধুমিতা সরকারও পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি বারাসতে কর্মরত। ডিউটি শেষ করে অবসর সময় তিনি স্বামীকে সাহায্য করেন।

    শিশুদের জামাকাপড়ের ওই দোকান প্রসঙ্গে অমিত বলেন, 'আসলে একসময় খুব কষ্টে মানুষ হয়েছি। নিজের ভালো পোশাক কেনার টাকা ছিল না। নতুন জামাকাপড় না পেয়ে পুজো মণ্ডপে যেতে পারতাম না। এখন দু'জনে মিলে যা রোজগার করি, তা দিয়ে আমাদের ভালো ভাবে চলে যায়। তাই, বাজে খরচ কমিয়ে কিছু অর্থ দিয়ে ৬ বছর আগে এই দোকান চালু করি।' অমিতের কথায়, 'বিনা পয়সায় জামা-কাপড় দেওয়া যেত। কিন্তু, ভিখারির মতো দিলে মানুষ নিতে লজ্জা পায়। তাই, সামান্য দামে তা বিক্রি করি।'

    একদিন সকালে, আট বছরের মনোজ মায়ের হাত ধরে দোকানে আসে। গায়ে ছেঁড়া জামা, চোখে কৌতূহল। তার মা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেন, 'দাদা... একটা জামা হবে? বিশেষ টাকা নেই।' এর পর তিনি দোকানে ঢুকে হতবাক হয়ে যান। ৫ টাকায় নতুন জামা! মনোজের হাতে সেই জামা তুলে দিতে গিয়ে মায়ের হাসি দেখে চোখে জল চলে আসে অমিতের।

    ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, 'পুলিশ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে থেকে যাঁরা এ ধরনের সেল্ফ সার্ভিস দিচ্ছেন তাঁদের আমরা প্রোমোট করছি। স্থানীয় থানার থেকে যাতে এ ধরনের কাজে সহযোগিতা পাওয়া যায় সে জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া আছে। শুধু তাই নয়, আমাদের কানে খবর এলে, আমাদের দিক থেকেও যা যা সাহায্য দরকার তা আমরা করছি।'

  • Link to this news (এই সময়)