• মশার বংশ ধ্বংস করতে NKDA–র ভরসা নৌকো
    এই সময় | ০২ জুন ২০২৫
  • প্রশান্ত ঘোষ

    নদীপথে তো বটেই, এমনকী বন্যার সময়ে প্লাবিত বহু জায়গায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকো। আর এ বার সেই নৌকো কি না মশা তাড়ানোর ভরসা!অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্যি।

    লাগাতার স্প্রে, ফগিং— কোনও কিছুতেই মশার বংশ ধ্বংস করা যাচ্ছে না। নিউ টাউনে এ সব ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মশা উড়ে নিউ টাউনে চলে আসছে। তাই, মশাকে সমূলে নির্মূল করতে এ বার নৌকোর উপর ভরসা রাখছে এনকেডিএ (নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)।

    নৌকো করেই এখন চলছে মশা মারার অভিযান। কারণ, সেই অভিযান চলছে খাল–বিলে। যাতে মশা, মশার লার্ভাকে শেষ করে দেওয়া যায় তাদের উৎসস্থলেই। নৌকোগুলো পরিবেশবান্ধবও— দূষণ হওয়ার ব্যাপার নেই। অভিযানকে আরও জোরদার করতে বাড়ানো হয়েছে নৌকোর সংখ্যা। আগে ছিল তিনটি, সেই জায়গায় এখন ১৫টি নৌকো নামানো হয়েছে নিউ টাউনের ২২টি পেরিফেরি ক্যানালে। তা ছাড়া, ওই নৌকাগুলো কাজ করছে বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালেও।

    পতঙ্গবিদদের বক্তব্য, জমা জলেই স্ত্রী মশা ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে দ্রুত লার্ভা বার হয়। কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গে এখনও বর্ষা নামেনি। তাই, ঠিক শহরের মধ্যে নয়, মশার লার্ভার বেশির ভাগ এখন জন্মাচ্ছে আশপাশের নিকাশি নালা ও খালগুলোয়। নিউ টাউনকে ঘিরে রয়েছে বাগজোলা ও কেষ্টপুর খাল। আবার নিউ টাউনের মধ্যে থাকা ২২টি পেরিফেরি ক্যানাল সরাসরি বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালের সঙ্গে যুক্ত।

    সেই সব ক্যানালে কাঠের তৈরি ছোট ছোট নৌকো বা শালতি নামানো হয়েছে। সেগুলো চালানো হয় বড় বাঁশ বা লগি দিয়ে। যন্ত্রচালিত না–হওয়ায় বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ হয় না। এনকেডিএ–র এক শীর্ষকর্তার মতে, ‘মশার বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে খাল হলো হাই রিস্ক জ়োন। এখানেই মশারা সব চেয়ে বেশি ডিম পাড়ে। তাই, খালের জলে স্প্রে করার পাশাপাশি, জলে জমে থাকা আবর্জনা, থার্মোকলের প্লেট, গাছের পাতা তুলে ফেলা হচ্ছে নেট দিয়ে।’

    জমা আবর্জনা যাতে খালের এক জায়গা থেকে অন্যত্র ভেসে যেতে না–পারে, তার জন্য বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। আবর্জনার একটা বড় অংশ ওখানে আটকে যাচ্ছে। তা ছাড়া, ড্রোনের সাহায্যে মেট্রো করিডর, নির্মীয়মাণ বহুতলগুলোর ছাদ, চৌবাচ্চা— এ সব জায়গায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। গত বছর নিউ টাউনের সব ক’টি পেরিফেরি ক্যানালে আড়াই লক্ষ গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যাটা দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে পাঁচ লক্ষ।

    ‘স্মার্ট সিটি’ নিউ টাউনের ৩০টি ব্লকে এখন মোট ৬০টির বেশি আবাসন। ওই আবাসনগুলোয় সব মিলিয়ে দু’লক্ষর কাছাকাছি মানুষের বসবাস। মশা নিধনের লক্ষ্যে এবং জমা জল যাতে না–জমে, সেই উদ্দেশ্যে ওই সব আবাসনে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে এনকেডিএ–র ৪৮টি টিম। তবে এখনও পর্যন্ত এই মরশুমে নিউ টাউনে এক জনও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হননি বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)