• উত্তর সিকিমে আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের উদ্ধারকাজ শুরু করা গেল না, ২ দিন বন্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক
    আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৫
  • টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উত্তর সিকিমের বেশ কিছু এলাকা। সেখানে আটকে থাকা পর্যটকদের রবিবারও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ কথা জানিয়েছেন উত্তর সিকিমের মঙ্গন জেলার পুলিশ সুপার। এই আবহে সোম এবং মঙ্গলবার বন্ধ থাকছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে ওই দু’দিন উত্তর সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধারকাজ কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

    এর মধ্যে বিপত্তি বৃদ্ধি করেছে ফিডাং বেইলি সেতুর ক্ষয়ক্ষতি। তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই সেতু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে সেতুটি রবিবার বন্ধ রেখে চলছে সংস্কারের কাজ। এর ফলে মঙ্গন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

    মেঘভাঙা বৃষ্টি চলছে উত্তর সিকিমে। তার জেরে তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সঙ্গে নেমেছে ধস। এর ফলে সেখানকার বহু এলাকা বাকি ভূখণ্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন পর্যটকেরা। শনিবার প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছিল, সেই সংখ্যাটা প্রায় দেড় হাজার। উত্তর সিকিমের মঙ্গন জেলার পুলিশ সুপার সোনম ডেটচু জানিয়েছেন, রবিবার বৃষ্টি এবং ধসের কারণে সেখান থেকে কোনও পর্যটককেই উদ্ধার করা যায়নি। সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে আগেই তাঁদের হোটেল এবং হোমস্টেতে থেকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তর সিকিমের অনেক জায়গাতেই বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। চুংথাঙে জলের সমস্যা রয়েছে। প্রশাসন ও সেনাবাহিনী যৌথ ভাবে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন ঘটছে।

    এর মধ্যে তিস্তার তীব্র জলস্রোতে আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফিডাং বেইলি সেতু। মঙ্গন এবং চুংথাঙের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে সেতুটি। সেটি পুরোপুরি বন্ধ রেখে চলছে সংস্কারের কাজ। সে কারণে সিকিমের বেশ কিছু অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি, সেনার গতিবিধিও ওই অঞ্চলে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘‘এই সেতু আমাদের জীবনরেখা। দ্রুত তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।’’ তাঁদের অভিযোগ, এক মাস আগে এই সেতু সংস্কার করতে বলে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হলেও লাভ হয়নি। যদিও জেলাশাসক এই অভিযোগ মানেননি। তিনি জানিয়েছেন, সেতু পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, এই সেতু সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায় গোটা মঙ্গন জেলা রাজ্যের বাকি অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

    সাংকালাং এলাকার একটি সেতুর স্তম্ভ ধসে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এতে উত্তর সিকিমের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশাপাশি আশেপাশের গ্রামগুলিতেও বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন থেকে সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং নদীর ধারে যেতে বারণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

    সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয় আগামিকাল থেকে পর্যটকদের উদ্ধার কাজ শুরু হবে। কিন্তু সেই নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। কারণ, সোম এবং মঙ্গলবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। নির্দেশিকায় তারা জানিয়েছে, আগামী ২ এবং ৩ তারিখ বন্ধ থাকছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্ষার মরসুমে জাতীয় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় মেরামতির প্রয়োজন হয়েছে। সুলতানে খোলা, লিখুভিড় ও মেল্লির কাছে মেরামতির কারণে সোম এবং মঙ্গলবার জাতীয় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

    রবিবারও মঙ্গন জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। আগামী ২৪ ঘণ্টা সিকিমের গ্যাংটক, নামচি, সোরেং, প্যাকিয়ং, গিয়ালসিংয়ে বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)