নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রবিবার জামাইষষ্ঠী বলে মেয়ে-জামাই ও শ্বশুর-শাশুড়ির আনন্দের শেষ নেই। শনিবার অফিস ছুটির পর অনেকেরই গন্তব্য ছিল শ্বশুরবাড়ি। অনেকে আবার রবিবার সকাল সকাল পাজামা-পাঞ্জাবি পরে হাতে মিষ্টির বাক্স ঝুলিয়ে পৌঁছেছেন। এবছর বাজারদর শ্বশুর-শাশুড়িদের পকেটে খুব একটা চাপ দেয়নি বলে মত অনেকের। তবে ইলিশের দাম ছিল চড়া। কালোজাম, কলা, লিচুর দামও বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা। আমের দাম কিন্তু ছিল আয়ত্বের মধ্যে। অনেকে গরমের জন্য মাটন বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। সে জায়গা পূরণ করেছে বিভিন্ন ধরনের মাছ। গরমের দুপুরে দই আর আমের শরবত ভরসা জুগিয়েছে বহু জামাইকে।
তা বলে কি পাঁঠার দোকানে একেবারে ভিড় ছিল না? ছিল ঠিকই। অনেক শ্বশুর আগের রাতেই জামাইদের খাইয়ে দিয়েছেন মাটন। আর রবিবারের মধ্যাহ্নভোজে রেখেছিলেন মাছ। পদ্মার ইলিশ বলে হাঁকডাক করে বিক্রেতারা দাম চড়িয়েছিলেন কিলো প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। দক্ষিণ কলকাতার বাজারগুলিতে পাবদা, কাতলা, রুই মাছের দাম কিলোতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি ছিল। দুই-আড়াই কিলো ওজনের ইলিশ কেটে দিচ্ছিলেন না কেউই। তাই দেখা গেল, কয়েকজন মিলে একটি ইলিশ কিনে ভাগ করে নিলেন। আম ৭০ থেকে ১০০ টাকা কিলো। লিচু কিলোতে ১৫০ টাকা। দাম চড়া কালোজাম, কলার।
অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী শ্রীরামপুরের শর্মিষ্ঠা দে বললেন, ‘আমার দুই জামাই। এই গরমে আর মাটন করিনি। গত রাতে চিকেন হয়েছিল। আজ ইলিশ কিনলাম। দু’হাজার ৭০০ টাকা কিলো নিল। সঙ্গে দই আর আমের শরবত। মোচাও রান্না করলাম।’ অনেকে বাড়িতে রান্নাবান্নার ঝক্কিতেই যাননি। বাড়িতে ক্লাউড কিচেন থেকে হোম ডেলিভারি কিংবা রেস্তরাঁতে নিয়ে গিয়ে জামাইকে খাইয়েছেন। ক্লাউড কিচেনগুলি এদিন ‘স্পেশাল জামাইষষ্ঠী থালি’ রেখেছিল অফারে।
অন্যদিকে জামাইরা সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন মিষ্টির দোকানে। মধ্য কলকাতার তালতলা এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণাভ সেন বললেন, ‘আজকাল তো এক হাতে মাছ আর অন্য হাতে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে যাওয়ার চল নেই। তাই শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য শুধু মিষ্টিই কিনলাম। সকলেরই এখন সুগার। তাই সুগার ফ্রি মিষ্টি নিলাম।’
সবমিলিয়ে শত ব্যস্ততা, চাকরির অনিশ্চয়তার মধ্যেও জামাইষষ্ঠী আজও জমজমাট। খই-মুড়কি খেয়ে বাড়ির সদর দরজায় শাশুড়িদের অপেক্ষার দিন এখন যদিও নেই। রিকশার প্যাঁক প্যাঁক শুনে উঁকি মারার চলও নেই। অপেক্ষা এখন কখন ফোন আসবে। রিকশা বদলেছে অ্যাপ ক্যাবে। তবুও এই মূল্যবৃদ্ধির আকালেও মেয়ে-জামাইকে দেখে শ্বশুড়-শাশুড়ির একমুখ আন্তরিক হাসি বাঙালির পারিবারিক বন্ধনকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আরও মজবুত করে চলেছে।