নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শনিবার রাতে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। রাস্তাঘাট ভিজে গেল। কিন্তু কলকাতায় গরম কমল না। কিছুতেই ঠান্ডা হল না আবহাওয়া। বাঙালি ঘরপোড়া গোরু। বাসে-অটোতে রাতেই আলোচনা, রবিবার দেখবেন সকাল থেকেই কাঠফাটা রোদ উঠবে। ঠিক সেটাই হল। রবিবার সকাল থেকেই রোদ। আর অসহনীয় আর্দ্রতা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ সূর্য যখন দিগন্তের পথে তখনও রাস্তাঘাটে দরদর করে ঘামছে শহরবাসী। দিনের বেলা অস্বস্তি প্রায় কাঁদিয়ে ছেড়েছে কলকাতাকে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে সামান্য হলেও কম। কিন্তু মানুষের হাতে থাকা স্মার্টফোন জানাল, এদিন ‘ফিলস লাইক’ সূচক ছিল ৪৩ ডিগ্রি।
এসি বাসে উঠেও ঘামছেন এক ব্যক্তি। লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘নিম্নচাপ-বৃষ্টি সব শেষ। এবার জুন মাসও গরমে পোড়ার সময়।’ পাশ থেকে অন্য এক ব্যক্তি বললেন, ‘মে মাস তো মোটামুটি ভালোই কাটল দাদা।’ বলেই নিজের ফোনে চোখ বুলিয়ে জানালেন, ‘এই দেখুন আজ তাপমাত্রা ৩৪। কিন্তু ফিলস লাইক ৪৩।’ চারপাশ ভেসে এল কয়েকজনের সমর্থন। গলা মিলিয়ে সবাই বললেন, ‘একদম ঠিক। যা ঘামছি, ৪০-এর গরম বলেই মনে হচ্ছে। বাসের এসিতে কুলোচ্ছে না।’ গড়িয়াহাটে মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলেন সুব্রত দত্ত। দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘জামাইষষ্ঠী করতে এখন হুগলি যাব। তার আগে মিষ্টি কিনতে এসেছি। টালিগঞ্জ থেকে এখানে আসতে বাইকে বসেও ঘেমে স্নান করে গেলাম। রোদ কম থাকবে ভেবে বিকেলের দিকে বেরলাম। তাতেও এই। কখন যে কী আবহাওয়া হচ্ছে এখন, বোঝা দায়।’ আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর এদিন জানিয়েছে, বাতাসে সর্বোচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯২ শতাংশ। রবিবার ছুটির দিন কলকাতার রাস্তাঘাট ছিল মোটামুটি ফাঁকাই। বিকেলের দিকে আকাশ মেঘলা। কিন্তু মেঘলা আকাশ সত্ত্বেও স্বস্তি থেকে গিয়েছে অধরা। কলকল করে ঘাম সঙ্গী করেই ছুটি কাটিয়েছে শহর।
আইটি কর্মী স্বর্ণালী রায় বললেন, ‘শনিবার রাতে দমদম থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি। ভিজলাম। আজকে আবার ঘামে ভিজছি। গরমে কাহিল পুরো। এখন কোনটা যে কী ঋতু বোঝা দায়!’ এই একই প্রশ্ন সবার। ‘এরকম অস্বস্তি আর কতদিন থাকবে?’ কেউ বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে গরম পড়বে। আর বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে। এখন তো এই স্বাভাবিক বিষয়গুলিই আর নেই।’ এই প্রবল অস্বস্তির মধ্যে কোনও সুখবর শোনাতে পারছে না হাওয়া অফিসও। তারা জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমবেশি এরকমই থাকবে আগামী কয়েকদিন। তবে বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
কিন্তু আজকাল বৃষ্টির পরও কমছে না অস্বস্তি। শহর ঘেমেনেয়ে একসা। এক রাতের বৃষ্টি মোটেও ঠান্ডা করছে না আবহাওয়া। উল্টে পরেরদিন সকাল থেকে রোদ চাঁদি ফাটাচ্ছে শরহবাসীর।