স্বপ্নপূরণের তাগিদে ঘুম হতো না, অবশেষে জাতীয় রেফারি সায়নী
বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বনগাঁ: এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই, যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমোতে দেয় না।’ বাগদার সায়নী রায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেননি। ফুটবলের রেফারি হওয়ার স্বপ্ন বরং তাঁকে ঘুমোতে দেয়নি। জেগে পরিশ্রম করে পূরণ করেছিলেন নিজের স্বপ্ন। বর্তমানে তিনি জাতীয় রেফারি। ফুটবল মাঠ শাসন করছেন। বাঁশি বাজিয়ে গোটা মাঠ নিয়ন্ত্রণ করেন। ভবিষ্যতে ফিফার জার্সি পরে মাঠ শাসন করতে চান। সেই লক্ষ্যে এখনও জেগে। এখনও দেখছেন স্বপ্ন।
বাগদার কাঁঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সায়নীদেবী। বাবা রামপ্রসাদ রায় কৃষক। মা শর্মিলাদেবী গৃহবধূ। ছোটবেলায় ফুটবল তেমন টানত না সায়নীকে। বাগদার হেলেঞ্চা হাইস্কুলে পড়তেন। সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তরুণ বিশ্বাস নামে জাতীয়স্তরের একজন রেফারি। তাঁর কাছ থেকে ফুটবল মাঠের গল্প শুনতেন সায়নীরা। এই করতে করতে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। তবে ফুটবলার হতে চাননি। প্রথম থেকেই স্যারের কথা শুনে ঠিক করেছিলেন রেফারি হবেন। সায়নী বলেন, ‘স্যারের কাছ থেকে ফুটবল মাঠের গল্প শুনে মনে হয়েছে রেফারির কাজটাই চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া অনেকে মহিলা ফুটবলার হন। কিন্তু মহিলা রেফারির সংখ্যা খুবই কম।’
এই সাফল্য অবশ্য একদিনে আসেনি। এই অবধি পৌঁছতে লাগাতার জেগে থাকতে হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে সায়নীকে। বনগাঁ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে তাঁদের বাড়ি। সেখান থেকে কলকাতা পৌঁছতে অনেক সময় লাগে। সে কারণে ক্লাসের আগের দিন চাকদহে মামার বাড়ি চলে যেতেন। সেখান থেকে ভোর ভোর পৌঁছতেন কলকাতা। সারাদিন ক্লাস করে ফিরতেন বাড়ি। ‘মেয়ে রেফারি?’ বিস্ময় প্রকাশ করে মুখ বেঁকাতেন অনেক পাড়া পড়শি। টিটকিরিও শুনতে হয়েছে। সায়নী বলেন, ‘এখন প্রতিবেশীরা গর্ব করে বলেন আমাদের গ্রামের মেয়ে জাতীয় রেফারি।’
ফুটবল মাঠে রেফারিদের অনেকসময় দর্শকদের কাছ থেকে নানা কথা শুনতে হয়। ওসবে বিশেষ কান দেন না সায়নী। মনে করেন, ভালো মন্দ সব দিকই থাকে। এসব নিয়েই চলতে হবে। এখন ফিফার জার্সি গায়ে গলানোই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। মেয়ের সাফল্যে গর্বিত মা শর্মিলাদেবী। তিনি বলেন, ‘আমরা ওকে প্রথম থেকেই সাহস দিয়েছি। আরও সাফল্য দেখতে চাই।’ স্বপ্ন দেখা শুরু যাঁর হাত ধরে সেই শিক্ষক তরুণ বিশ্বাস বলেন, ‘ওর এই সাফল্য আমারই সাফল্য বলে মনে হয়। আমি ফিফার জার্সি পরে ওকে দেখতে চাই।’ এবার দ্বিতীয় স্বপ্ন সফলের লক্ষ্যে জেগে থাকছেন সায়নী। - নিজস্ব চিত্র