• টাকা দিলেও মালিকপক্ষ নির্মাণ বর্জ্য দিচ্ছে না, নজরদারি বৃদ্ধিতে উদ্যোগ
    বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ১৩ নম্বর ক্যানাল স্ট্রিট, ২৩ নম্বর কনভেন্ট রোড কিংবা ৬ নম্বর পানবাগান লেন– এইসব ঠিকানায় পুরনো নির্মাণ ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন বিল্ডিং। কিন্তু নিয়ম অনুসারে সেখানকার নির্মাণ বর্জ্য (রাবিশ) মালিকপক্ষ বা ডেভেলপার পুরসভার কাছে জমা করেনি। বর্তমান নিয়মে বিল্ডিং নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদন নেওয়ার সময়ই নির্মাণ বর্জ্য সরানোর জন্য পুরসভাকে টাকা দিতে হয় ডেভলপার বা প্রোমোটারকে। সেটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, এসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পুরসভাকে টাকা দেওয়ার পরেও মেলেনি নির্মাণ বর্জ্য। শুধু এই দু-তিনটি ঠিকানা নয়, শহরজুড়ে এমন ১৪-১৫টি নির্মাণ পুরসভা চিহ্নিত করেছে, যেখান থেকে নির্মাণ বর্জ্য পাওয়া যায়নি। সেই রাবিশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এবার তাই নির্মাণ বর্জ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও আটঘাট বাঁধতে চলেছে পুরসভা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম চাইছেন, যাতে শহরের ১০০ শতাংশ রাবিশ পুরসভার হাতেই আসে। তাই মেয়রের নির্দেশে বিল্ডিং, জঞ্জাল সাফাই ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পাশাপাশি এবার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

    রাবিশ দিয়ে পুকুর ভরাটের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে খোদ ফিরহাদ হাকিম মাঝেরহাট ব্রিজের নির্মাণ বর্জ্য ভর্তি লরি আটকেছিলেন। পুরসভা নিউটাউনের পাথরঘাটায় নির্মাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট তৈরি করেছে। কিন্তু নানা চেষ্টা করেও সেখানে পর্যাপ্ত নির্মাণ বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাই ইতিমধ্যেই বরোভিত্তিক ১৬ জন বিল্ডিং বিভাগের অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জঞ্জাল বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এলাকার কোথায় কোথায় নির্মাণ হচ্ছে, রাবিশ তৈরি হচ্ছে, তার উপর নজরদারি রাখেন এবং জঞ্জাল বিভাগকে খবর দেন। কিন্তু তারপরেও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো যায়নি।

    পুরসভা সূত্রে খবর, পাথরঘাটার ইউনিটে প্রতিদিন ৫০০ টন নির্মাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। সেখানে দিনে তার অর্ধেক, অর্থাৎ মাত্র ২৫০ টন রাবিশ মিলছে। এই অবস্থায় মেয়র ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকেও এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পুর কমিশনার একটি বৈঠকও করেন। জঞ্জাল বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, রাবিশ পুরসভাকে দেওয়া বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কোনও নির্মাণ থেকে কতটা রাবিশ উৎপন্ন হতে পারে, সেটা হিসেব করে টাকাও নেওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে, সকলেই সেই টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে রাবিশ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার নামকাওয়াস্তে কয়েক টন রাবিশ পাঠাচ্ছেন। বাকিটা অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই জায়গাটাকেই আটকানো প্রয়োজন। পাশাপাশি, শহরে বরোস্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগও বহু জায়গাতেই নানা ধরনের কাজ করে। সেখানেও প্রচুর নির্মাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেগুলিও যাতে পুরসভার প্লান্টে আসে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে।

    সূত্রের খবর, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ ধরলে প্রোমোটার বা ডেভলপারের তরফে পুরসভাকে যাতে জানানো হয়, এটা বিল্ডিং বিভাগকে নিশ্চিত করতে হবে। তখন জঞ্জাল বিভাগ গিয়ে সেখানকার রাবিশ সংগ্রহ করবে। আর প্রোমোটার যদি নির্মাণ বর্জ্য না দেন, তাহলে নির্মাণের ভিত তৈরির পর যখন বিল্ডিং বিভাগ পরিদর্শনে যায় এবং পরবর্তী নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তখনই ওই নির্মাণ আটকানো প্রয়োজন। এটা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেটাই দেখছে কর্তৃপক্ষ।
  • Link to this news (বর্তমান)