গায়ে সাদা জামা এবং কালো প্যান্ট। বুকের উপর চকচকে নেমপ্লেট। তাতে লেখা ‘চিফ টিকিট ইন্সপেক্টর (CTI), হাওড়া’। ওই পোশাকেই তিনি যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছিলেন। রবিবার শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষীকান্তপুর স্টেশনে। তাঁকে টিকিটও দেখাচ্ছিলেন যাত্রীরা। টিকিট যাঁদের কাছে নেই তাঁদের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু তাঁর হাবভাব, পোশাক এবং বুকে লাগানো নেমপ্লেট দেখেই সন্দেহ জাগে ওই স্টেশনের কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকদের। একটু ভালো করে খুঁটিয়ে দেখার পরেই বোঝা যায় যে ব্যক্তি এতক্ষণ যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছিলেন তিনি আদৌ রেলের কর্মী নন। তার পরেই সেই নকল টিকিট পরীক্ষককে তুলে দেওয়া হয় রেল পুলিশের হাতে।
কী ভাবে ধরা পড়লেন?
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর নাম সুপ্রতীক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি এলাকার বাসিন্দা তিনি। গত কয়েক বছর ধরেই ওই ব্যক্তি দক্ষিণ বারাসাতে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তাঁকেই দেখা যায় লক্ষীকান্তপুর স্টেশনে টিকিট পরীক্ষক হিসেবে।
রেল পুলিশ এবং লক্ষীকান্তপুর স্টেশনের রেলকর্মীরা জানান, সাধারণ চোখে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে ওই ব্যক্তি ‘নকল টিকিট পরীক্ষক’। তাঁর বুকে লাগানো নেমপ্লেট দেখেই সন্দেহ হয় আসল রেলকর্মীদের। তাঁরা জানান, ওই ব্যক্তির বুকে যে নেমপ্লেট ছিল তাতে চিফ টিকিট ইন্সপেক্টর লেখা থাকলেও তা ছিল হাওড়া বিভাগের। কিন্তু ওই স্টেশন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার অন্তর্গত। তার পরেই তাঁকে জেরা করতে শুরু করেন রেল পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকরা। তখনই জানা যায়, এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই কাজ করছিলেন তিনি। তার পরেই বছর ৪৫-এর ওই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় আরপিএফ। তাঁকে তুলে দেওয়া হয় জিআরপির হাতে।
পিছনে গভীর চক্রান্ত?
এই ঘটনার পিছনে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে তাই এখন জানতে চাইছে রেলপুলিশ। জানা গিয়েছে, রবিবারই তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। ধৃত ব্যক্তিকে জেরা করে এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত কে কারা জড়িত তা জানতে চাইছেন রেলের আধিকারিকরা। তাঁদের সন্দেহ, এর পিছনে বড় চক্রান্ত এবং জালিয়াত চক্র আছে। ওই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে কারা জড়িত এবং কোথায় কোথায় এই কৌশলে প্রতারণা চালানো হয়েছে তা জানতে চাইছেন তারা। তবে, এই দিন ব্যস্ত লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে নকল টিকিট পরীক্ষক ধরা পড়ার পরে রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার নিত্যযাত্রীরা।