• নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে জামাই রূপে সাজিয়ে জামাইষষ্ঠী পালন ভক্তদের
    এই সময় | ০২ জুন ২০২৫
  • রবিবার বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ম্বরে পালিত হলো জামাই ষষ্ঠীর অনুষ্ঠান। শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি দিয়ে জামাইকে বরণ করে নেন শাশুড়িরা। পছন্দসই বিভিন্ন রকম পদ রেঁধে খাওয়ানো হয় জামাইকে। চারিদিকে যখন এ ভাবে জামাইষষ্ঠী পালন হচ্ছে, তখন নবদ্বীপে শ্রীশ্রী ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যকে জামাই রূপে সাজিয়ে জামাইষষ্ঠী পালন করলেন ভক্তরা।

    কী ভাবে সজ্জিত হয়েছিলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য?

    রবিবার দুপুরে তাঁকে নতুন পোশাক পরিয়ে জামাই রূপে সাজিয়ে তোলা হয়। বাড়ির মহিলারা তালপাতার পাখা দিয়ে মহাপ্রভুকে হাওয়া করেন। ভক্তদের মধ্যে অনেক মহিলা জল ও মিষ্টি নিয়ে এসে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে জামাইয়ের মতো বরণ করেন। সারাদিন ধরেই মন্দিরে ছিল জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। এ বারে একাধিক বৈষ্ণব ভক্তরাও হাজির হয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠানে।

    জামাই মহাপ্রভুকে ভোগে কী কী দেওয়া হয়েছিল?

    সকালে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ঘুম ভাঙার পর জল-মিষ্টি সহযোগে তাঁকে প্রাত:রাশ দেওয়া হয়। তার মধ্যে ছিল চিড়ে, দই, মিষ্টি। দুপুরে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সামনে তাঁর পছন্দসই খাবার দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। তার মধ্যে ছিল মোচার ঘন্ট, কচু শাক, পাঁচ রকমের ভাজা, টক ডাল, ছানার ডালনা, পুষ্পান্ন, চাটনি, দই ও মিষ্টি। দুপুরে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। বিকেলবেলা ফের প্রভুকে মিষ্টি ও জল দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। এর পর রাতে লুচি, সুজি, পায়েস, মিষ্টি ও ক্ষীর দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হবে মহাপ্রভুকে।

    কথিত রয়েছে, সনাতন মিশ্রের এক কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া এবং মাধবাচার্য ও যাদবাচার্য নামে তিন সন্তান ছিল। মহাপ্রভু দীক্ষা গ্রহণের পর সন্ন্যাস নেওয়ার আগে তাঁর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সময় মহাপ্রভু স্ত্রীর কাছ থেকে সন্ন্যাস হওয়ার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। স্ত্রীর অনুমতি দেওয়ার পর নিজের পাদুকা রেখে গৃহত্যাগী হয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। সেই পাদুকা বাপের বাড়িতে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করে সেবা করা শুরু করেন বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী।

    সনাতন মিশ্র যাদবাচার্যকে দত্তক নিয়েছিলেন। সেই যাদবাচার্যের বর্তমান বংশধরদের ১৩ তম পুরুষ হলেন গোস্বামীর পরিবারের লোকজন। প্রতিবারের মতো এ বারও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে জামাই বরণ করে তাঁর জামাইষষ্ঠী পালন করল নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত শ্রীশ্রী ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির।

    বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাইয়ের পরিবারের ১৩ তম পুরুষ রূপ গোস্বামী বলেন, ‘বছরের ৩৬৪ দিন মহাপ্রভু ভক্তদের দেবতা। মাত্র একটি দিন তিনি জামাই। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পরিবারের সদস্য হওয়ায় আমরা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে এ দিন জামাই রূপে বরণ করি। আদর, আপ্যায়ন করি। তালপাতার পাখা দিয়ে বাড়ির মহিলারা তাঁকে হাওয়া দিয়ে শীতল বাতাস দেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচ রকম ভোগ দেওয়া হয় মহাপ্রভুকে। জামাই হিসাবে মহাপ্রভুকে আদর আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি যাতে না থাকে আমরা সেই চেষ্টাই করি।’

  • Link to this news (এই সময়)