‘হকের চাকরিটা আগে ফিরে পাই মা…জামাইষষ্ঠী পরেও হবে’, জামাই কৃষ্ণগোপালের এই করুণ আর্তি শোনার পর আর তাঁকে বাড়িতে আসার জন্য জেদ করেননি শাশুড়ি দীপালি চক্রবর্তী। বিয়ের পর এই প্রথম শ্বশুরবাড়ি গেলেন না পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের দেউলি কলসবাড় রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের রসায়নের শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, তিনি ‘যোগ্য’, তার পরেও তাঁর চাকরি গিয়েছে আদালতের নির্দেশে। সেই জন্য পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন তিনি।
আনটেন্টেড বা যোগ্যদের সুস্পষ্ট তালিকা এবং ওএমআর প্রকাশের দাবিতে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণগোপালরা। মেদিনীপুর ছাড়িয়ে কলকাতার বুকে চলা আন্দোলনেরও অন্যতম 'মুখ' এখন তিনি। গত সপ্তাহে মেদিনীপুরে একের পর এক প্রতিবাদী মিছিল সংগঠিত করার পর শনিবার ফের কলকাতার মৌলালীতে গিয়ে গণ-কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণগোপাল।
২০১৮ সালে রসায়নের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক হিসেবে সবংয়ের দেউলি কলসবাড় রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে যোগদান করেন বছর ৩৫-র কৃষ্ণগোপাল। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন গড়বেতার বাসিন্দা পেশায় পুরোহিত দিলীপ চক্রবর্তী ও দীপালি চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়ে তিথি-কে। কৃষ্ণগোপাল ও তিথির ৪ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। শিক্ষকতা ছাড়াও অবিভক্ত মেদিনীপুরের একজন সমাজকর্মী হিসেবেও জনপ্রিয় কৃষ্ণগোপাল।
‘মেদিনীপুর ছাত্রসমাজ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি পদেও রয়েছেন তিনি। ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে প্রায়ই পথে নামেন কৃষ্ণগোপালরা। শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পরই তিনি শাশুড়িকে ফোন করে জানান, এ বছর জামাইষষ্ঠীতে তিনি যেতে পারবেন না। চাকরি ফেরত পাওয়ার পর ফের ষষ্ঠী উপভোগ করবেন। ফোনের ওপ্রান্ত থেকেই আশীর্বাদ করে শাশুড়ি বলেন, ‘জয়ী হও তোমরা’।
রবিবার দুপুরে মেদিনীপুরের ভাড়াবাড়িতে স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে মাছ ও ভাত দিয়েই ভোজন সেরেছেন কৃষ্ণগোপাল। তাঁর দৃপ্ত ঘোষণা, ‘কোনও ভাবেই আমরা পরীক্ষা দেব না। ফর্ম ফিল আপও করব না। কতবার নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেব? আর কেনই বা দেব? অন্যের অপরাধে আমাদের শাস্তি দেওয়া হলো কেন? অবিলম্বে আমাদের (যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের) ওএমআর-এর ইমেজ কপি-সহ যোগ্যতার সমস্ত নথি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করুক রাজ্য সরকার। রিভিউ পিটিশনে কেবল যোগ্যদের হয়েই সওয়াল করতে হবে। অযোগ্যদের জন্য নয়। তবেই একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট যোগ্যদের চাকরি ফেরাতে পারে।’