খাস কলকাতার বন্দর এলাকার একটি টাকা লেনদেনের দোকান। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাক গুপ্তচর সংস্থার চরচক্র এই দোকান থেকেই তিন-তিনবার মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছে। সেই লেনদেনে যুক্ত ব্যক্তিদের খোঁজ চলছে। তাঁদের মধ্যে শহরের কেউ আছেন কি না তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। পাক-চরচক্রের সন্ধানে নেমে শনিবার একবালপুর এলাকার ওই দোকানে হানা দিয়েছিল এনআইএ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, একবালপুরের ওই দোকানের পাশাপাশি তপসিয়া এলাকার একটি হোটেল এবং বেনিয়াপুকুর এলাকার একটি বাড়িতেও গিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দল। এ দিন পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং অসমেও তল্লাশি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী সময়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে তথ্য পাচারের অভিযোগে মোতিরাম জাঠ নামে সিআরপি-র এক জওয়ান, ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রা-সহ বহু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চরচক্রের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই এ দিনের তল্লাশি। এ দিন রাতে এনআইএ জানিয়েছে,পাকিস্তান-সম্পর্কিত গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগের মামলায় দেশের আটটি রাজ্যের ১৫টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তল্লাশি হয়েছে সন্দেহভাজনদের বাড়ি এবং দোকানে। মোবাইল, ল্যাপটপ, আর্থিক নথি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
সূত্রের খবর, কলকাতার একবালপুরের ওই দোকান থেকে তদন্তকারীরা একাধিক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছেন। দোকানের মালিককে কাল, সোমবার এনআইএ অফিসে দেখা করার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। দোকানের তরফে গোয়েন্দাদের জানানো হয়, বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের টাকা ট্রান্সফার করা তাঁদের ব্যবসা। তবে পাকিস্তানে টাকা লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করা হয়। লেনদেন সংক্রান্ত নানা নথি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন দোকান কর্তৃপক্ষ।
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, এ রাজ্যে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর চরচক্রের হদিস মিলেছে। বাংলাদেশেও গত কয়েক মাসে আইএসআই তৎপর হয়েছে। সেই সব সূত্র ধরেই কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনার খবর গোয়েন্দারা পেয়েছেন। সেই ব্যক্তিদের অস্থায়ী আস্থানা বলে চিহ্নিত কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চলছে। এক গোয়েন্দাকর্তার বক্তব্য, ‘‘সিআরপি জওয়ান মোতিরামের গ্রেফতারি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে নিরাপত্তাবাহিনীর ভিতরেও চর ঢুকেছে। তাই এ বার এই চরচক্র নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ আছে।’’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পালাবদলের পরে সে দেশে বিভিন্ন ভারতবিরোধী এবং জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এ রাজ্যে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের একাধিক ডেরার খোঁজও মিলেছে।
বিভিন্ন বিদেশি নাগরিক এবং জঙ্গি সংগঠনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থার যোগসাজশও গোয়েন্দাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর ভিতরেও পাক-যোগ খুঁজতেও তৎপরতা বেড়েছে। প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসে পহেলগাম হামলার কিছু দিন আগে পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন সিআরপি জওয়ান মোতিরাম। পরে অন্যত্র বদলি করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, ২০২৩ সাল থেকে তিনি পাকিস্তানের আধিকারিকদের মূলত বাহিনীর অপারেশন, গতিবিধি ইত্যাদির নানা তথ্য পাচার করতেন। পাক আধিকারিকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও হয়েছে।