কৌশিক দে, মালদা
সামান্য পোস্ত, সর্ষে বাটা আর অল্প ধনেপাতা দিয়ে বাঁশপাতা ভাঁপা। মুখে দিলেই স্বর্গীয় তৃপ্তি। আবার মুচমুচে করে ভাজা করলে তার স্বাদ অন্যরকম। মালদার নদীয়ালি মাছ বাঁশপাতা ইলিশের স্বাদকেও হার মানায়। কিন্তু এই মাছ এখন ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ মৎস্যজীবীদের। হালে এই সুস্বাদু মাছকে টিঁকিয়ে রাখতে মৎস্য দপ্তর পুকুরে বা বিলে চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
যদিও কৃত্রিমভাবে এই প্রজাতির মাছ জলাশয়, খাল, বিল, পুকুরে চাষ করে এখনও সে ভাবে সাফল্য আসেনি। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রজাতির মাছ চাষ করতে অনেক সময় লাগে। ফলে মৎস্যজীবীদের অতটা আগ্রহ নেই। অভিজ্ঞ মৎস্যজীবদের দাবি, বাঁশপাতা মাছের প্রজনন বাড়িয়ে বৃদ্ধি ঘটানোর ক্ষেত্রে নদী ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। নদীয়ালি এই মাছকে ছোট অবস্থায় জালে তোলা হচ্ছে। ফলে এমন সুস্বাদু মাছ এখন আর মালদার গঙ্গা, ফুলহার, মহানন্দা, টাঙন –সহ অন্য নদীতে কম উঠছে। বর্তমানে বাঁশপাতা মাছ আমদানি হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে।
এক সময়ে মালদার কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রয়াত রেলমন্ত্রী এবিএ গনিখান চৌধুরীর প্রিয় মাছ ছিল বাঁশপাতা। দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গনিখান চৌধুরীর বাড়িতে এলে তাঁর দুপুরের মেনুতে দেওয়া হয় বাঁশপাতা মাছের পদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদায় এসেছেন বহুবার। এমন সুস্বাদু মাছ তাঁর মেনু থেকেও বাদ যায়নি।
মালদার বিভিন্ন বাজারে একটা সময়ে বিপুল পরিমাণ বাঁশপাতা মাছ পাওয়া যেত। দামও ছিল সস্তা। কিন্তু এখন সেই বাঁশপাতা মাছ একটু বড় সাইজের নিতে গেলে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় খাসির মাংসের দামকেও হারিয়ে দিয়েছে এই মাছ। বর্তমানে দরদামে ইলিশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এই মাছ। চাহিদা থাকায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা বাইরে থেকেই এই মাছ আনছেন।
ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘এই নদীয়ালি মাছ এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু মৎস্য দপ্তরের সহযোগিতায় বাইরে থেকে চারাপোনা সংগ্রহ করে বাঁশপাতা মাছ পুকুর, বিল, জলাশয়ে বিকল্পভাবে চাষ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও অনেক মৎস্যজীবী অল্প সময়ে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রুই, কাতল, বাটা, মৃগেল এই ধরনের মাছ চাষে বেশি সময় দিচ্ছেন। বাঁশপাতা মাছটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী। ছোট থেকে বড় হতে অনেক সময় লাগে। সর্বোচ্চ আট আঙুল লম্বা হয়।’
রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা গনিখান চৌধুরীর ভাগ্নী মৌসম নুর বলেন, ‘মামা গনিখান চৌধুরী খুব তৃপ্তি করে এই মাছ খেতেন। রাজ্য তথা দেশের অনেক তাবড় তাবড় নেতা মামার সঙ্গে দেখা করতে মালদার কোতুয়ালি ভবনে এলে তাঁদের মেনুতে এই সুস্বাদু মাছ রাখা হতো।’ মৎস্য দপ্তরের জেলা আধিকারিক অঞ্জনকুমার বসু বলেন, ‘বাঁশপাতা মাছ কৃত্তিম উপায়ে জলাশয়ে চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে সাফল্য এসেছে। মৎস্যজীবীদের এই মাছ চাষে আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’