সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবিবাসরীয় বিকেলে শহরের বিশিষ্ট বৃত্তের নজর ছিল ‘মার্কস ইন কলকাতা’র দিকে। জয়ন্ত কৃপালানির সঙ্গে একমঞ্চে ‘অভিনেতা’ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পারফরম্যান্স দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন সকলেই। এদিন সন্ধেবেলা এই শো ছিল জি ডি বিড়লা সভাঘরে। আর সেখানেই বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও ঢুকতে দেওয়া হল না নাট্যব্যক্তিত্ব জয়রাজ ভট্টাচার্যকে। কেন? কারণ সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশপথে পোশাক ফতোয়ার শিকার অভিনেতা-পরিচালক। জয়রাজ বলছেন, লুঙ্গি পরে থাকায় তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দেননি দ্বাররক্ষীরা।
ঠিক কী ঘটেছে?
গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে সমাজ মাধ্যমের পাতায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন জয়রাজ। তিনি লিখেছেন, “জি ডি বিড়লা সভাঘরে আজ ‘মার্ক্স ইন কলকাতা’র শো আছে। বৈধ টিকিট থাকার সত্ত্বেও আমি এইমাত্র অডিটোরিয়ামে ঢুকতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলাম, কারণ লুঙ্গি পরেছিলাম। দ্বাররক্ষক স্পষ্ট জানালেন- ‘লুঙ্গি নট এলাউড!’ কী আর করা যায়, লুঙ্গি গুটিয়ে মানে মানে ভদ্রলোকের জায়গা থেকে কেটে পড়লাম!” এই ঘটনার পরই ক্ষোভ উগড়়ে দিয়ে জয়রাজের বন্ধু শিল্পী অর্ক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনিও পরবর্তীতে লুঙ্গি পরেই জিডি বিড়লা সভাঘরে যাবেন। এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়তেই ‘স্বপ্নসন্ধানী’ নাট্যদলের তরফে ঋদ্ধি সেন জয়রাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কারণ সংশ্লিষ্ট নাট্যদলের ৩৩ বছর উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী তিনটি নাটক মঞ্চস্থের আয়োজন করা হয়েছে। সেই তালিকার অন্যতম ‘মার্কস ইন কলকাতা’। এপ্রসঙ্গে জয়রাজ জানালেন, “এইমাত্র ঋদ্ধি সেন ফোন করল। আমি এই কথাটা স্পষ্ট করে জানানো কর্তব্য মনে করছি, এই যে সমস্যা, এটার দায় তো কোনোভাবেই স্বপ্নসন্ধানীর নয়, তারা সামান্যতম বিড়ম্বনা অস্বস্তির মধ্যে পড়ুক, আমি চাই না। আমার ধারণা এটা কোনও সুস্থ মানুষই চাইবে না। এই সমস্যা হল কর্তৃপক্ষের। এমনকী ওই দ্বাররক্ষকেরও নয়। উপরমহল ওঁকে নির্দেশ না দিলে, তিনি নিজের বিবেচনায় তো হঠাৎ এমন কাণ্ড ঘটাবেন না!” নিজের মতো করে সরব ঋদ্ধি সেনও।
ঋদ্ধির মন্তব্য, “জয়রাজ ভট্টাচার্য-সহ আমাদের সকলের কাছে এই ঘটনা অপমানজনক এবং অনভিপ্রেত, তবে এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও ব্যক্তির সাথে না ঘটে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, এমন ঘটনা আর ভবিষ্যতে হবে না, লুঙ্গি হোক, ধুতি বা হাফ প্যান্ট, ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় রাখাই সব চেয়ে বড় প্রতিবাদ। এদিকে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে অর্ক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এতে স্পষ্ট কী কুৎসিতভাবে এখনও কলোনিয়াল চাটুকারিতা, বর্ণ-ধর্ম বিদ্বেষী অসভ্যতা ও ক্রমশ বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতা একেবারে প্রতিদিনের জীবনে আমার শহরের কোণায় কোণায় দেখা যায়। কীভাবে বৈচিত্রের, তর্কের, চর্চার এই শহরকে সাংস্কৃতিকস্তরে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনা নতুন নয়। জয়রাজের সাথে বা আশিষের সাথে এটা ঘটলে চোখে পড়ে। অথচ লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে রোজ এই আচরণ করা হয় এই শহরে। জয়রাজ বলে ক্ষমা চাওয়া হল। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এটা হয় না।”