ভারতের ফুটবলে নতুন জটিলতা, ফেডারেশনকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে নিয়ে গেল যোগীরাজ্যের ক্লাব
আনন্দবাজার | ৩১ মে ২০২৫
আই লিগ শেষ হয়ে গিয়েছে মাসদেড়েক আগে। তবু জটিলতা কাটার কোনও নামগন্ধ নেই। শনিবার ফেডারেশনের একটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আবার আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস বা ক্যাসে যাচ্ছে ইন্টার কাশী।
গত এপ্রিলে নামধারী এফসি ফেডারেশনকে অভিযোগ করে জানায় যে, ইন্টার কাশী আই লিগের নিয়মের ৬.৫.৬ এবং ৬.৫.৭ ধারা ভেঙেছে। এই ধারা অনুযায়ী, একটি ক্লাব সর্বোচ্চ ছ’জন বিদেশি নথিভুক্তি করাতে পারবে। যে বিদেশিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে একই মরসুমে দ্বিতীয় বার সই করানো যাবে না।
নামধারীর দাবি, নবম রাউন্ডের আগে স্পেনের স্ট্রাইকার মার্কো বারকোর বদলে সার্বিয়ার মাতিজা বাবোভিচকে সই করিয়েছিল কাশী। ১৫তম রাউন্ডের আগে আবার বারকোকে ফিরিয়ে আনা হয় জুয়ান পেরেজের বদলে। এই কাজ নিয়মবিরুদ্ধ বলে তাদের দাবি। নামধারীর সঙ্গে অভিযোগ জানায় চার্চিল ব্রাদার্স এবং রিয়াল কাশ্মীরও। দুই দলের বিরুদ্ধে বারকো খেলেছেন।
শনিবার ফেডারেশনের আপিল কমিটি জানিয়েছে, নামধারী, চার্চিল এবং কাশ্মীরের দাবি সঠিক। তারা জানিয়েছে, কাশীর চার পয়েন্ট কেটে নেওয়া হবে। দু’পয়েন্ট পাবে চার্চিল এবং তিন পয়েন্ট পাবে নামধারী। সেই অনুযায়ী, চার্চিলের পয়েন্ট হবে ৪২। কাশীর পয়েন্ট কমে হবে ৩৭। নামধারীর হবে ৩৫। চার্চিল একক ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে কাশী জানিয়েছে, তারা ক্যাসে যাবে। কী ভাবে সহজ এবং সাধারণ নিয়মও ফেডারেশন বুঝতে পারছে না তা ভেবে অবাক তারা। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ক্যাসে যাচ্ছে কাশী। আগের মামলাটি এখনও ফয়সালা হয়নি।
গত ১৮ এপ্রিল চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পরেই ক্যাসে আবেদন করে কাশী। ক্যাসের আপিল্স আরবিট্রেশন ডিভিশনের সহ-সভাপতি এলিজাবেথ স্টেনার ২৭ এপ্রিল ফেডারেশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে।
সে দিনই ফেডারেশন একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, রবিবারই গোয়ায় গিয়ে চার্চিলকে আই লিগের ট্রফি এবং পদক দেওয়া হয়ে গিয়েছে! তবে ফেডারেশনের দফতরে ছুটি থাকার কারণে ক্যাসের রায় তাদের কাছে এসে পৌঁছনোর আগেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়ে যায়। পরে ফেডারেশনের তরফে থেকে চার্চিলের কাছে ট্রফি ফেরতও চাওয়া হয়। নিজেদের যুক্তি জানানোর জন্য ফেডারেশন, চার্চিল এবং নামধারী এফসি-কে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ক্যাস।
উল্লেখ্য, আই লিগ শেষ হওয়ার পর চার্চিল ৪০ পয়েন্টে শেষ করে। ইন্টার কাশী শেষ করে ৩৯ পয়েন্টে। সমস্যা ইন্টার কাশীর একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে। গত ১৩ জানুয়ারি নামধারী এফসি-র সঙ্গে খেলা ছিল কাশীর। সেই ম্যাচে কাশী ০-২ গোলে হারে। তবে ম্যাচের পরেই নামধারীর বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) কাছে অভিযোগ করে কাশী। তাদের দাবি, ওই ম্যাচে নামধারী অবৈধ ভাবে ক্লেডসন কার্ভালহো দা সিলভাকে খেলিয়েছে। আগেই চারটি হলুদ কার্ড দেখায় ওই ম্যাচে নির্বাসিত থাকার কথা ছিল ক্লেডসনের। কিন্তু তিনি কাশীর বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে খেলেন।
ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কাশীর আবেদন শুনে সেই ম্যাচে নামধারীকে পরাজিত ঘোষণা করে এবং কাশীকে তিন পয়েন্ট দিয়ে দেয়। কিন্তু ২৭ মার্চ নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে তারা। এতে তীব্র প্রতিবাদ করে কাশী। আইনি হুমকিও দিয়ে রাখে তারা। তাতেও লাভ হয়নি। ফেডারেশন স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ায় ওই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পায়নি কাশী। তাই চার্চিলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
সে দিনই ইন্টার কাশী এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ৬ এপ্রিলের আগেই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত তা অনাবশ্যক দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। পাশাপাশি, আপিল কমিটির শুনানিতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। তাই ‘স্বচ্ছ’ বিচার পেতে ক্যাসের দ্বারস্থ হচ্ছে তারা। কাশীর দাবি, শুরু থেকেই তারা সাধারণ একটি নিয়ম কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানালেও তা শোনা হয়নি। সঠিক বিচার পেতে সব রকম চেষ্টা করবে তারা।