পাকিস্তানের হাত থেকে বেঁচে ফিরব ভাবিনি, যেন পুনর্জন্ম হল! মন্ত্রীর থেকে সম্বর্ধনা নিতে নিতে বললেন পূর্ণম
আনন্দবাজার | ৩১ মে ২০২৫
প্রায় তিন সপ্তাহের টানাপড়েন শেষে গত ২৩ মে দেশে ফিরেছেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। গত সপ্তাহেই ফিরেছেন হুগলির রিষড়ায়, নিজের বাড়িতে। সেই থেকে তাঁকে ঘিরে স্থানীয়দের উৎসাহের শেষ নেই। শনিবারও হাওড়ায় একটি অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা নিতে ডাকা হয়েছিল পূর্ণমকে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়। সেখানেই মন্ত্রীর হাত থেকে সম্বর্ধনা নেওয়ার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ওই বিএসএফ জওয়ান। বলেন, ‘‘পাক সেনার হাতে বন্দি ছিলাম। বাড়ি ফেরার আশা ছিল না। যেন পুনর্জন্ম হল!’’
মধ্য হাওড়ায় শনিবার একটি অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা দেওয়া হয় বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকে। তাঁকে সম্মানিত করেন মন্ত্রী অরূপ রায় স্বয়ং। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। সেখানেই নিজের মুক্তির জন্য সমস্ত দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান পূর্ণম। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে এক বার আটকে পড়লে কী কী হতে পারে, তা আপনারা অনুমান করতে পারছেন। ওই ক’দিন অনেক কষ্টে ছিলাম। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ত। চিন্তায় থাকতাম।’’ পূর্ণম জানান, সংসারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাই তাঁর কিছু হয়ে গেলে তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের কী হবে, তা ভেবে সব সময়ে উদ্বেগে থাকতেন তিনি। পূর্ণমের কথায়, ‘‘পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে পড়লে ভারতে ফেরার আশা থাকে না। এখন ফিরে এসে মনে হচ্ছে, যেন পুনর্জন্ম হয়েছে! দেশবাসীর ভালবাসাতেই আমি ফিরে আসতে পেরেছি।’’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘পূর্ণমের মতো জওয়ানেরা সীমান্ত পাহারা দেন বলেই আমরা নিশ্চিন্তে বাড়িতে ঘুমোতে পারি। এই জওয়ানেরা আমাদের গর্ব। যে দিন থেকে তিনি আটকে পড়েছিলেন, তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ফিরে আসায় আমরা সবাই খুশি।’’ তবে পূর্ণম জানিয়েছেন, আবার তিনি পুরনো কাজের জায়গায় ফিরতে চান।
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল (পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পরের দিন) পঞ্জাবের পঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে গিয়েছিলেন পূর্ণম। পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করে। সীমান্তে এমন ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু অত সহজে পূর্ণমকে ছাড়েনি পাকিস্তান। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের আবহে তাঁর ঘরে ফেরা নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিএসএফের সঙ্গে একের পর এক ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে শেষমেশ সপ্তাহ দুয়েক আগে অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন বিএসএফ কনস্টেবল। প্রায় তিন সপ্তাহের টানাপড়েন শেষে গত ২৩ মে হুগলির রিষড়ার বাড়িতে ফেরেন তিনি। সেই থেকে পূর্ণমকে ঘিরে উন্মাদনার কমতি নেই।