আরজি কর আন্দোলনকে ‘সচল’ করে নিহত চিকিৎসককে বিচার দিতে ফের রাস্তায় ‘ছাত্রসমাজ’, এ বারের প্রতিবাদ কোন পথে ?
আনন্দবাজার | ৩১ মে ২০২৫
আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে উত্তাল হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশ। সেই ঘটনা কেন্দ্র করে ‘ছাত্রসমাজ’-এর নামে একদল যুবক রাজ্য সরকারের সদর দফতর নবান্ন অভিযান করেছিলেন। উত্তাল সেই সময় কেটে গিয়ে নিত্যনতুন বিষয় উঠে আসায় পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে গিয়েছে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা। কিন্তু সেই নাগরিক আন্দোলনও স্তিমিত। কিন্তু সেই ‘ছাত্রসমাজ’ আবার পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, নির্যাতিতার বাবা-মাকে ‘বিচার’ পাইয়ে দেওয়া।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই উদ্যোগের সূচনা করা হয়েছে। বেহালা সখেরবাজার সুপার মার্কেটের সামনে এক পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভার শীর্ষক ছিল ‘চায়ের টেবিলে বাংলা’। যেখানে যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি আরজি কর আন্দোলনের নানা বিষয় নিয়েও। তবে ওই আয়োজনকে পথসভার নাম দিতে নারাজ ছাত্রসমাজের অন্যতম প্রতিনিধি সায়ন লাহিড়ি। ছোট মাপের ওই পথসভাকে তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন ‘চায়ের কাপ, গিটারের ছন্দ আর আমাদের ভাবনা— এই আড্ডা হোক আগামী বাংলার ভাবনা।’ এমন উদ্যোগের মাধ্যমে আরজি করের ঘটনা পরের আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করে তা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়াই তাদের প্রধান কর্তব্য বলে জানিয়েছেন ‘ছাত্রসমাজ’-এর প্রতিনিধিরা। সায়নের বক্তব্য, ‘‘আরজি কর হাসপাতালে ওই দিদির খুনের ঘটনার পরে আমরা বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলাম। কিন্তু এখনও সেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি বলেই ছাত্রসমাজ মনে করছে। তাই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়নি। একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আমরা যুবসমাজের জন্য আলোচনার পরিসর তৈরি করছি। যেখানে যুবসমাজের প্রতিনিধিরা এসে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এর মাধ্যমে আবার আমরা আরজি কর হাসপাতালে নিহত দিদির জন্য বিচারের দাবিতে সরব হব। কারণ, অন্যরা তাঁর মৃত্যুর কথা ভুলে গেলেও আমরা তা স্মরণে রেখেছি।’’ তবে নবান্ন অভিযান কর্মসূচির পর নানা পুলিশি মামলায় জড়িয়ে পড়েছে তাদের নাম। এ ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হলেও নিজেদের এই উদ্যোগ থেকে পিছু হটতে নারাজ ‘ছাত্রসমাজ’-এর এই নেতা। আগামী দিনেও শহর এবং শহরতলিতে এই ধরনের সভার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। যুবসমাজকে আকৃষ্ট করতে চায়ের আড্ডা, গান-বাজনা এবং সব ধরনের আলোচনার জন্য যে পরিসর উন্মুক্ত থাকবে।
তবে এই উদ্যোগ ‘রাজনৈতিক’ কি না, তা নিয়ে প্রথম দিনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপি-র বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁরা সভাকে ‘অন্য’ ভাবে পেশ করতেই হিরণকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অভিনেতার উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ভিড় জমেছিল। তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে আগ্রহী ছিল পথচলতি জনতা। হিরণের দাবি, ‘‘আমার এখানে আসার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সায়নেরা যখন ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন, তখনও আমি প্রথম সারিতে থেকে তাঁদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলাম। এখন ওঁরা নতুন করে কিছু শুরু করতে চাইছেন। সেখানে আমায় দাদা হিসেবে তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এসেছি। আগামী দিনেও তাঁরা আমাকে পাশে পেতে চাইলে অবশ্যই আমি থাকব।’’
২০২৪ সালের ২৭ অগস্ট ‘ছাত্রসমাজ’ যে নবান্ন অভিযান করেছিল, সেই আন্দোলনের নেপথ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘মস্তিষ্ক’ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল রাজ্যের শাসক তৃণমূল। এ বার নতুন উদ্যোগের শুরুতেই হাজির বিজেপি বিধায়ক হিরণ। তবে সে বিষয়ে ‘ছাত্রসমাজ’-এর প্রতিনিধিদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের মুক্তমঞ্চে এসে যে কেউ আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। আরজি কর আন্দোলনের পাশেও দাঁড়াতে পারেন। কেউ অভিযোগ করলে করতেই পারেন। তবে এতে রাজনীতির কোনও রং নেই। আমাদের মঞ্চেও সরাসরি রাজনীতির কোনও রং নেই।’’