নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কেষ্টর দেখা মিলল না। বেলা ১১টার মধ্যে বোলপুরে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও)-এর অফিসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রত মণ্ডলের। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি সেখানে যাননি। তার বদলে পাঠান তাঁর সাত আইনজীবীকে। আইনজীবীদের অনুব্রতের অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তাঁদের এক জন প্রশ্ন এড়িয়ে জানান, পুলিশের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করতে এসডিপিও অফিসে এসেছিলেন তাঁরা। কেষ্টর আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুব্রত অসুস্থতার কারণে হাজির হতে পারেননি। এর পরে পুলিশ অনুব্রতের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করে কিনা, করলেও তা কী, এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপ-কাণ্ড নিয়ে শোরগোল পড়তেই শুক্রবার দুপুরে অনুব্রতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছিল তৃণমূল। দলের নির্দেশে লিখিত ভাবে পুলিশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ তৃণমূল নেতা অনুব্রত। তার পর ভিডিয়োবার্তা দিয়েও পুলিশের কাছেও মাফ চান তিনি। মেনে নেন ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপে ‘অনুব্রত মণ্ডল বলছি’ বলে যে কণ্ঠ শোনা গিয়েছে, সেটা তাঁরই। তৃণমূল নেতার দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বরাবরই তাঁর সুসম্পর্ক। পুলিশকে নিয়ে কখনও খারাপ কথা বলেন না। কিন্তু ‘সে দিন’ অন্য একটি ঘটনা ঘটেছিল।
দলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে প্রথম চিঠি দেওয়ার মিনিট ৫০ পরে দ্বিতীয় চিঠি পাঠান অনুব্রত। সেখানে তাঁর বক্তব্য ছিল আরও সংক্ষিপ্ত। তৃণমূল সূত্রে খবর, অনুব্রতকে বয়ান বদল করিয়ে আবার চিঠি পাঠাতে বলেন শীর্ষ নেতৃত্বই। উল্লেখ্য, বোলপুর থানার আইসি-কে ফোনে ‘গালিগালাজ’ এবং ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার সকালে অনুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার ডট কম। তখন তিনি জানান, ভাইরাল অডিয়োয় যে কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, সেটা তাঁর নয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কেন আইসিকে হুমকি দেব? আইসি এক জনকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমি ফোন করলে বলে, ফোন রাখ।’’
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘মিস্টার অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) এবং ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।’’ শনিবার সকাল ১১টায় এসডিপিও অফিসে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শুক্রবার দুপুরেই তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে অনুব্রতকে নোটিস ধরায় পুলিশ।