‘দাদা এ…একটু বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে’। লাল লাল চোখ, মুখ থেকে মদের গন্ধ, সবমিলিয়ে প্রথমে এড়িয়েই যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন উর্দিধারীরা। কিন্তু সেই ‘মাতাল’-ও নাছোড়বান্দা। ‘অনেককটা মদ খেয়ে ফেলেছি। বাড়ি ছেড়ে আসতেই হবে’, বার বার কাতর আর্জি শুনে মন গলে যায় পুলিশকর্মীর। শুধু তাই নয়, চা খাইয়ে পুলিশ ভ্যানে করে ছেড়ে আসেন বাড়ি। আর এই ঘটনা এখন ঘুরছে লোকের মুখে মুখে। দৃশ্যটি বীরভূমের।
দিনকয়েক আগে মৃত্যু হয়েছে ভগ্নিপতির। সেই জন্য শনিবার বোলপুর সংলগ্ন মনোহরপুরের আদিবাসী পাড়ায় বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন পারুই থানার অন্তর্গত হেদা ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬০-এর প্রবীণ। কিন্তু বোনের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথেই বোলপুরের একটি মদের দোকানে গিয়ে মদ্যপান করেন তিনি। এর পরেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মদের দোকান থেকে বেশ কিছুটা হেঁটে যাওয়ার পরেই বল্লভপুর ব্রিজের কাছ থেকে ঝিমঝিম করতে শুরু করে তাঁর মাথা।
কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন এই পরিস্থিতিতে? তা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়েন। সেই সময়েই দেখতে পান সামনে দাঁড়িয়ে পারুই থানার পুলিশের একটি গাড়ি। এর পরেই পুলিশ আধিকারিক সুব্রত অধিকারীর কাছে তিনি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানান। বার বার বলেন, ‘আমি অনেক মদ খেয়েছি। আমাকে বাড়ি ছেড়ে আসতেই হবে।’ প্রথমে আমল দেননি সুব্রত অধিকারী। কিন্তু পিছু ছাড়তে রাজি হননি সোমনাথ। অবশেষে মন গলে যায় সুব্রতরও। তিনি পুলিশ ভ্যানে করে তাঁকে বাড়িতে ছেড়ে আসেন।
এই ঘটনায় এই পুলিশ আধিকারিককে ধন্যবাদ জানান ওই প্রবীণের পরিবার। নেশা কাটার পর লজ্জা জড়ানো গলায় এই প্রবীণ বলেন, ‘আমি মাঠে ঘাটে খেটে খাওয়া মানুষ। সারাদিন ভেড়া আর গরু চরাই। দিনের শেষে একটু মদ না হলে চলে না। তবে আজ বোনের বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে মদের দোকান দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলাম। পরে বুঝলাম যে মাথা ঝিমঝিম করছে। বাড়ি যেতে পারব না। সামনেই পুলিশ দেখে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তখনই স্যার আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ।’