এই সময়, দুর্গাপুর: রেললাইন মেরামতের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বুদবুদ থানার ওসি মনোজিৎ ধারার বিরুদ্ধে। শুধু মারধর নয়।
অভিযোগ, সার্ভিস রিভলভার দেখিয়ে ওই রেলকর্মীকে এনকাউন্টার করার হুমকি দিয়েছেন ওসি। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ঘটনাটি ঘটে মানকর স্টেশন সংলগ্ন রেলগেটে।
ঘটনা প্রসঙ্গে বুদবুদ ও কাঁকসা থানা এলাকার এসিপি সুমন জয়সওয়াল বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। রেলের তরফে গেট বন্ধ রাখার নোটিস পুলিশকে অনেক দেরি করে জানানো হয়। রেলগেট বন্ধ থাকায় বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। রেলের আধিকারিকরা এসেছিলেন। কথা হয়েছে। বিষয়টি মিটে গিয়েছে।’
কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ ‘দাবাং’ হয়ে উঠলেন কেন বুদবুদ থানার ওসি? স্থানীয় রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, রেলের তরফে আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, মানকর স্টেশনে আপ ১ নম্বর ট্র্যাক মেরামতের জন্য বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি— তিন দিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯২ নম্বর রেলগেট বন্ধ থাকবে।
এই ৮ ঘণ্টার জন্য বিকল্প ৯৪ নম্বর গেট দিয়ে সমস্ত গাড়ি পারাপার করবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। সেই মতো বৃহস্পতিবার রাতে রেলগেট বন্ধ থাকায় রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বালি বোঝাই ট্রাক সমেত অন্যান্য গাড়ি। ঘটনাস্থলে আসেন বুদবুদ থানার ওসি মনোজিৎ ধারা-সহ আরও দু’জন পুলিশকর্মী।
সেই সময়ে ৯৪ নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি পারাপার করাচ্ছিলেন রেলকর্মী বেজনাথ কুমার বিশ্বকর্মা। তিনি বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে সমস্ত গাড়ি ৯৪ নম্বর গেট দিয়ে পারাপার করার ব্যবস্থা করা হয়। রাত প্রায় ২টো ২০ মিনিট নাগাদ বুদবুদ থানার ওসির সঙ্গে আরও দুই পুলিশকর্মী রেলগেটে আসেন।
আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, রেলগেট বন্ধ করার ব্যাপারে থানায় কেন জানানো হয়নি। রেল আগে থেকেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জানালে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন ওসি। গাড়িতে উঠতে বলেন। গাড়িতে ওঠার পরে রিভলভার দেখিয়ে এনকাউন্টার করে দেওয়ার হুমকিও দেন।
থানায় নিয়ে যান আমাকে। সেখানে মারধর করে লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সুইচ অফ করে দেয় পুলিশ। পরে আমার সহকর্মীরা থানায় আসেন। ভোর প্রায় সাড়ে ৪টে নাগাদ আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এই ঘটনাকে ঘিরে শুক্রবার সকালেও উত্তেজনা ছড়ায় মানকর স্টেশনে। প্রতিবাদে সকাল ৯টা থেকে স্টেশন সংলগ্ন রেলগেট বন্ধ করে দেন ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
দাঁড়িয়ে পড়ে যাত্রিবাহী বাস সমেত সমস্ত গাড়ি। বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। প্রায় এক ঘণ্টা পরে রেল আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এক নিত্যযাত্রী গৌরব দাস বলেন, ‘রেলগেট বন্ধ থাকায় কাজে যেতে পারিনি। একদিনের বেতন পাব না।’
বিক্ষোভকারী এক রেলকর্মী রাধেশ্যাম প্রামাণিক বলেন, ‘কাউকে কিছু না বলে আমাদের এক কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বুদবুদ থানার ওসি। অনেকক্ষণ ৯৪ নম্বর রেলগেট খোলা ছিল। ওই কর্মীর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ওই সময়ে যদি কোনও ট্রেন চলে আসত আর ট্রাক বা অন্য গাড়ি লাইনের উপর থাকত, তা হলে কী হতো তা বলার প্রয়োজন আছে? ট্রেনও বেলাইন হতে পারত। এর জন্য কিন্তু দায়ী থাকত বুদবুদ থানার ওসি।’