• কলেজে ভর্তি কবে, উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে
    এই সময় | ৩১ মে ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ৭ মে। তারপরে কেটে গিয়েছে তিন সপ্তাহ। অথচ, এখনও চা‍লু হলো না অভিন্ন কেন্দ্রীয় কলেজে ভর্তির পোর্টাল। সদ্য পাশ করা পড়ুয়ারা কে, কোন কলেজে পড়বেন, তা নিয়ে ক্রমে উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।

    শুধু মেদিনীপুরের দুই জেলা বা ঝাড়গ্রাম নয়, সারা রাজ্যেই দৃশ্যটা কার্যত একই। শুধু পড়ুয়া বা তাঁদের অভিভাবকরাই নন, এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের সরকারি ও সরকার–পোষিত কলেজ কর্তৃপক্ষও।

    গত বছর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে বাতিল হয়েছিল ২০১০ ও তার পরের ওবিসি তালিকা। ফলে, স্কুল-কলেজ ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছিল।

    সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। চলছে মামলাও। হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মার্চে সর্বশেষ শুনানিতে রাজ্যই জানায়, নতুন করে ওবিসি সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সেই কাজে তিন মাস সময় লাগতে পারে। ওবিসি জট না-কাটলে অভিন্ন কেন্দ্রীয় কলেজে ভর্তির পোর্টাল চালু করার নির্দেশিকা আসবে না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর সুকুমার সেনগুপ্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ দীপককুমার ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা তৈরি। কিন্তু পোর্টাল চালু না-হওয়ায় ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না।’ গত বছরেও ভর্তির হার কম ছিল বলে জানিয়ে তাঁর আশঙ্কা, ‘এ বছরেও বিলম্বের কারণে পরিস্থিতি একই রকম হবে।’

    একই মত গড়বেতা কলেজের অধ্যক্ষ হরিপ্রসাদ সরকার ও নাড়াজোল রাজ কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব মণ্ডলেরও। বাসুদেবের দাবি, ‘এ সব জটিলতার কারণে গ্রামীণ কলেজগুলো সবদিক থেকে আরও পিছিয়ে পড়ছে।’

    ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট দশটি সরকারি ও সরকার-পোষিত কলেজ রয়েছে। কিন্তু কোনওটিতেই এখনও ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু না-হওয়ায় হতাশ পড়ুয়ারাও। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী পায়েল পাত্রের কথায়, ‘আমরা ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ভর্তি হতে চাই। বাইরের কলেজেও অনলাইনে আবেদন করেছি। কী যে হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

    ভর্তি পিছোলে যে পরীক্ষা পিছোবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেই পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো যাবে তা নিয়েও বাড়ছে উদ্বেগ। তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনের আশঙ্কা, ‘এমনটা চলতে থাকলে অনেক পড়ুয়াই অন্য রাজ্যের কোনও কলেজে ভর্তি হয়ে যাবেন।’

    শুধু কলেজই নয়, ছাত্র সংগঠনগুলোও এই প্রসঙ্গে সরব হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক রনিত বেরার দাবি, ‘সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে। বেসরকারি কলেজগুলো আগে থেকেই ভর্তি নিচ্ছে। সরকারি কলেজে ভর্তি শুরু না–হওয়ায় ছাত্র হারানোর আশঙ্কা বাড়ছে।’

    ডিএসও–র জেলা সম্পাদিকা তনুশ্রী বেজ জানান, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জট দ্রুত মিটিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

    তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘আমরাও চাই, ভর্তি সঠিক নিয়মে হোক। আমাদের বিশ্বাস, সরকার সময় মতো পদক্ষেপ করবে।’ গত বছর ২৪ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি চলেছিল, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে টিএমসিপি–র রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ সেনগুপ্তর দাবি, ‘এ বারেও ওই একই সময়ে ভর্তি শুরু হবে।’

    তবে বাস্তবে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভরসা হারাচ্ছেন। অভিভাবকরাও চিন্তিত সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে, গত বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ভর্তি নিয়ে জটিলতা নিরসনে ২০০৯–এর ওবিসি তালিকা মানার রায় দেয় বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চ।

    সেই রায়ের ভিত্তিতেই এই প্রথম সমাধানের একটা পথ খুলল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। তবে কলেজে ভর্তির জন্য কোনও সমাধানসূত্র বের করে দ্রুত নির্দেশিকা জারি না–করলে বহু পড়ুয়া হয়তো অন্য রাজ্যে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যাবেন। এতে সরকারি কলেজের ভবিষ্যৎ আরও বিপন্ন হবে বলেই আশঙ্কা শিক্ষা-মহলের।

    তথ্য সহায়তা: পুলক বেরা ও বুদ্ধদেব বেরা

  • Link to this news (এই সময়)