• বিধিতে বদল, স্বচ্ছতা আনতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ SSC-র
    এই সময় | ৩১ মে ২০২৫
  • এই সময়: দুর্নাীতির জেরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের পৌনে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর প্যানেল সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার পর ঢেলে সাজল শিক্ষক নিয়োগের বিধি। কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বার বার ওএমআর মূল্যায়ন ও সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে এসএসসি।

    এমনকী, প্যানেলে মেয়াদ বহির্ভূত তালিকা থেকেও গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি পদে বিপুল সংখ্যক নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সে সব ক্ষেত্রে এ বার থেকে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তার জন্য নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত একগুচ্ছ বিধি সংস্কার করে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। যা চাকরিপ্রার্থীদের একটা বড় অংশের পাশাপাশি আইনজীবী মহলের অনেককেও আশ্বস্ত করেছে।

    দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব বিনোদ কুমারের স্বাক্ষর করা উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের বিধি প্রকাশিত হয়েছে।

    ওই বিধিতে পাল্টে ফেলা হয়েছে নিয়োগ ও পরীক্ষা ব্যবস্থাকেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ইন্টারভিউয়ের পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে ক্লাসরুম ডেমো এবং শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে।

    তাতে শুধু স্থায়ী শিক্ষকরাই (সুপ্রিম–নির্দেশে চাকরিহারারা) নন, রাজ্য জুড়ে শিক্ষক–শিক্ষিকার আকালে নিয়োগের সুযোগ পাবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান করেছেন, এমন চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষক–শিক্ষিকারাও।

    তাঁদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা ও ক্লাসরুম ডেমো— দু’টি ক্ষেত্রের প্রতিটিতে ১০ নম্বর করে মোট ২০ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষাতেও একই ব্যবস্থা চালু করেছিলেন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। ঘটনাচক্রে, তিনিই বর্তমানে এসএসসি–র চেয়ারম্যান।

    স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এই প্রথম এসএসসি–র নিয়োগ পরীক্ষায় ওয়েবসাইটে ইন্টারভিউ তালিকা ও প্যানেল প্রকাশ করা হবে। গত দেড় দশক ধরে বিরোধীরা এ নিয়ে বারবার সরব হয়েছিলেন।

    অভিযোগ উঠেছিল, নিয়োগ দুর্নীতি নিশ্চিত করতে ওয়েবসাইটে লিখিত পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের তালিকা ও ইন্টারভিউয়ের পর প্যানেল প্রকাশ করাই হতো না। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে এসএসসি জানিয়েছিল, যাঁদের নাম তারা সুপারিশ করেনি, এমন অনেককেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দিয়েছিল। এসএসসি–র নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই সমস্যা অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    স্কুলশিক্ষা দপ্তর প্রকাশিত নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ প্যানেলের মেয়াদ এক বছরের। এসএসসি চাইলে প্যানেলের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়াতে সরকারের কাছে আর্জি জানাতে পারবে। তবে তারপর ওএমআর–এর হার্ড কপি আরও দু’বছর সংরক্ষণ করতে হবে কমিশনকে।

    ওএমআর–এর স্ক্যান্‌ড (ডিজিটাল) কপি ১০ বছর সংরক্ষণ করবে এসএসসি। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ওএমআর সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

    নতুন নিয়োগ বিধিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার পরেই ওএমআর-এর ডুপ্লিকেট কপি শিক্ষক পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের হাতে হাতে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই মডেল আনসার–কি কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। যাকে চ্যালেঞ্জও করতে পারবে প্রার্থীরা। এমনকী, ১০টি শূন্যপদের জন্য এ বার থেকে ১৪ থেকে ১৬ জনের প্যানেল বেরোবে।

  • Link to this news (এই সময়)