বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম
পাড় ভাঙছে যখন তখন। এক এক করে তলিয়ে যাচ্ছে ঘর-উঠোন-জমি-জিরেত। এলাকার নাম লালগড়। আর নদীর নাম কংসাবতী।
বাঁকুড়া থেকে ভালুকখুলিয়া গ্রামের কাছে ঝাড়গ্রামে প্রবেশ করেছে এই নদী। আর লালগড় ব্লকের যে এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে সে সব জায়গাতেই আতঙ্কের আর এক নাম হয়ে উঠেছে কংসাবতী। গত কয়েকদিন ধরে কংসাবতীর রাক্ষুসে মেজাজ দেখে ভয়ে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।
লালগড় ব্লকের বসন্তপুর গ্রাম গা ঘেঁসে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী। নদীর পাড়েই স্বপন পাড়ালি ও তাঁর পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি। গাছ, কলপাড়, উঠোন নিয়ে বেশ বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে বাড়িটি।
কিন্তু কংসাবতীর আগ্রাসী মেজাজে উঠোন পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে আসছে নদী। এ বার হয়ত ভিটেটুকুও যাবে কংসাবতীর গ্রাসে। আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে পোড়ালি পরিবারের।
স্বপন পাড়ালি বলেন, ‘একটা সময়ে আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ছিল নদী। বাড়ির সামনে ছিল বড় একটা উঠোন। গোরু, মোষ, ছাগল বাঁধা থাকত। আমরা ভাইয়েরা সেখানে খেলা করতাম। চোখের সামনে দেখতে দেখতে নদী এগিয়ে এল। এখন এক এক করে গিলে খাচ্ছে সব। বাড়িটাও আর বাঁচাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’ বর্ষা পুরোপুরি আসার আগেই তাই পোড়ালি পরিবার পৈতৃক ভিটে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে ছয় ভাই মিলে নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। স্বপন আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘প্রশাসনকে বহু বার বিষয়টি জানানো হয়েছে। নদীপাড় বাঁধানো হলে আমাদের বসতভিটা ছেড়ে যেতে হতো না। আগামী দিনে বসন্তপুর গ্রামটাই হয়তো আর থাকবে না।’
একা পোড়ালি পরিবার নয়, কংসাবতীর এই ভাঙনের শিকার হয়েছে গ্রামের একাধিক পরিবার। এই গ্রামেরই বাসিন্দা, পেশায় মাছ ব্যবসায়ী বিষ্ণুপদ শীট, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে জহর মাহাতোদের কথায়, ‘একটা সময়ে নদী বসন্তপুর গ্রাম থেকে অনেকটাই দূরে ছিল। নদী এখন যে জায়গা দিয়ে বইছে সেখানে বাড়িঘর ছিল। দিনের পর দিন গ্রামের দিকেই এগিয়ে আসছে নদীটি। পাড় যদি বাঁধানো না-হয় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই গ্রামটাও আর থাকবে না।’
দুই ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনি এবং স্বামীর সঙ্গে নদীর পাড়েই বাড়ি করে আছেন বাসনা মুইশান। তিনি বলেন, ‘বর্ষার সময়ে নদীতে জল বাড়লে আমরা দিনের বেলায় বাড়িতে থাকলেও রাতে অন্যের বাড়িতে চলে যাই। মাঝে মধ্যে এমন শব্দ করে পাড় ভাঙে মনে হয়, এই বুঝি আমাদের বাড়িটাও চলে গেল।’
জেলা সেচ দপ্তরের আধিকারিক নমিত সরকার বলেন, ‘আঁধারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তপুর গ্রাম সংলগ্ন নদীর পাড় বাঁধানোর প্রস্তাব উপর মহলে পাঠানো হয়েছে। বিনপুরের নদী তীরবর্তী এলাকায় ধাপে ধাপে পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে। অনুমোদন এলে এই এলাকাতেও কাজ শুরু হবে।’ গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, আরও কত ভাঙনের পরে শুরু হবে কাজ?