• বাবা-মাকে খুন করে তথ্য লোপাট, বাংলাদেশ হয়ে মায়ানমার পালানোর ছক কষে মেমারির ইঞ্জিনিয়ার!
    প্রতিদিন | ৩১ মে ২০২৫
  • সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নিখুঁত পরিকল্পনা। বাবা-মাকে গলার নলি কেটে খুন করে কার্যত কোনও চিহ্ন না রেখেই পলাতে চেয়েছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবীর ওরফে আসিফ। কিন্তু ধর্মীয় কারণে মাথা গরম করে ফেলে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর একটি মাদ্রাসায় ছুরি চালিয়ে কয়েকজনকে জখম করে ধরা পড়ে যায় হুমায়ুন।

    বুধবার ভোরে মেমারির বাড়ির সামনে রাস্তায় রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল মুস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মমতাজ পরভিনের। খোঁজ মিলছিল না ছেলে হুমায়ুনের। সূত্রের খবর, বাড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক মেলেনি। রাস্তার ক্যামেরার একটা ফুটেজে তাকে ভোরে দিকে একটি পাত্র নিয়ে উঠোনে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। অন্য ক্যামেরার ফুটেজে কিছু মেলেনি। বাড়িতেই হুমায়ুন তার মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিল। কিন্তু তার সমস্ত ডেটাই মুছে দিয়ে গিয়েছিল। এমনকী তার সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট বা ডিলিট করে দিয়েছিল। ফলে সেখান থেকে তথ্য পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এমনকী খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র বা ছুরিটিও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল হুমায়ুন। ফলে তদন্তে বাঝা পেতে হয় পুলিশকে।

    বর্তমানে বনগাঁ থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছে হুমায়ুন। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের মোটিভ স্পষ্ট হবে তদন্তকারীদের কাছে। রহস্যের জট খুলবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হুমায়ুনকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করতে শুক্রবার বর্ধমান সিজিএম আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। শনিবার বনগাঁ পুলিশের হেফাজত শেষে ফের হুমায়ুনকে সেখানকার আদালতে পেশ করা হবে। তার পর তাকে হেফাজতে পাবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই ফরেনসিক টিম নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। এদিকে, শুক্রবার ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্ট এনেছিল পুলিশ। ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্টরা বাড়ি ও ঘটনাস্থল থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছেন। সব কিছুর রিপোর্ট পেলে তদন্তের অভিমুখ আরও স্পষ্ট হবে।

    প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হুমায়ুনই খুন করেছে তার বাবা-মাকে। এখন ঠোস সবুতের অপেক্ষায়। ফরেনসিক রিপোর্ট ও ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্টদের রিপোর্ট এই কাজে অনেকটাই সহায়ক হবে তদন্তকারীদের। পুলিশের কাছে এক আধিকারিক জানান, মোবাইলেরৎডেটা ডিলিট করে রেখে যাওয়া, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র লোপাট করে দেওয়া এবং পালানোর পদ্ধতি থেকে স্পষ্ট হুমায়ুন একজন পেশাদার অপরাধীদের মতো সব কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে মাথা গরম করে বনগাঁয় মাদ্রাসায় হামলা না চালালে হয়তো তাকে ধরা অনেক কষ্টকর হতো। পরিকল্পনা মতো বাংলাদেশ হয়ে মায়ানমার চলে গেলে তার হদিশ হয়তো কোনওদিন পাওয়াই যেত না।
  • Link to this news (প্রতিদিন)