• যাদবপুরে বিটেক পড়া মেধাবীই যে বাবা-মাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করবে কেউ ভাবেনি! ডিভোর্সই কি...
    ২৪ ঘন্টা | ৩১ মে ২০২৫
  • পার্থ চৌধুরী: মেমারির জোড়া খুনের ঘটনায় বাবা মা কে খুন করে ধৃত হুমায়ুন ওরফ আশিকের ব্যাপারে নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। ঠান্ডা মাথার ভদ্র আশিক যে ভিতরে ভিতরে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে বুঝতে পারছেন না কেউ।

    আত্মীয়দের বয়ান:

    তার পিসি রীণা চৌধুরী জানান, যাদবপুরে বি টেকে ভাল ফল করে সে। সে সময় সেখান থেকেই চাকরি পেয়ে যায় ভাল কোম্পানিতে। টাকা পয়সা পেয়ে ধর্মীয় স্থানে বা গরিবদের দান করে দিত। তিনি জানান, তার মানসিক সমস্যা নিয়ে বাবা চিন্তিত ছিলেন।

    আশিকের পিসেমশাই চৌধুরী রফিকুল আলম জানান, বাড়িতে টাকা পয়সা দিত না সে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর কিছুদিন নিঁখোজ হয়ে যায়। হিমাচল প্রদেশ থেকে তাকে খুঁজে আনেন বাবা মা। চার বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। গত কয়েক মাস বাবা মায়ের সঙ্গেই থাকত। কারও সঙ্গে মিশত না। দিনে ঘুমোত। রাতে ল্যাপটপে কী যেন করত। সে তো নিজের বাবা মাকে খুন করেছে? উত্তরে তারা জানান,  আমাদের আর কিছু বলার নেই। সে তো নিজেই স্বীকার করেছে।

    এদিকে আততায়ী হুমায়ুন কবিরের পিসতুতো দাদা কাজী আখতার আলি জানান, তারা এই ঘটনা ঘটবে কখনও ভাবেননি। এর আগে যতবার কথা হয়েছে, মামাতো ভাই হুমায়ুনকে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। তবে সে কারও সঙ্গে মিশত না। বাড়ি এলেও একাই থাকত বেশিরভাগ সময়। 

    সিসিটিভি ফুটেজ 

    বাবা মাকে খুন করে মেমারি মন্তেস্বর রোড হয়ে পালাচ্ছে হুমায়ুন। এই ছবি ধরে পড়েছে ওই দিন মেমারির কদমপুরে। সে দুটি মোবাইল ব্যবহার করত।বাড়িতে তার একটি কিপ্যাড ফোনটি পুলিশ উদ্ধার করলেও তার স্মার্ট ফোনের এখনও হদিশ পায় নি পুলিস।

    ধোঁয়াশায় আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা

    কী কারণে বাবা-মাকে নৃশংসভাবে খুন করল হুমায়ুন তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। বৃহস্পতিবার রাতেই বনগাঁয় পুলিসের হাতে ধরা পড়েছে মেমারিতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া দম্পতির খুনি ছেলে হুমায়ুন কবির ওরফে আশিক। আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আশিক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকতেন।  তাঁর বিয়েও হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকায় তাঁকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন বাবা-মা। সেটাই কাল হল।

    ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ

    এবার জোড়া খুন কান্ডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দল। গতকাল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নমুনা সংগ্রহ করার পর, শুক্রবার ঘটনাস্থলে  আসেন সি আই ডির ৩ সদস্যের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা এসে তদন্ত করেন। নমুনা সংগ্রহ করেন। 

    মেধাবী হুমায়ুন-ই বাবা-মায়ের খুনি!

    হুমায়ুনের সম্পর্কিত ভাই সৈয়দ মহম্মদ জানান, ছোটো থেকে কোনও কিছুর অভাব ছিল না হুমায়ুনের জীবনে।  অনেক সম্পত্তি। পড়াশোনাতেও ভালো। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা সম্ভব ছিল না। কিন্তু শুনেছই তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন আশিক। সবচেয়ে আশ্চর্যের হল গতকাল আশিক দিল্লি না গিয়ে বনগাঁ কেন গেল? বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

    ছুরি নিয়েই বাবার সঙ্গে নামাজে!

    এলাকার বাসিন্দা রায়হান আলি জানান, ঘটনার আগের রাতেও বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে এসেছিলেন হুমায়ুন ওরফে আশিক। তখন তাঁর কাছে ছুরি ছিল। সেই ছুরি তিনি অনলাইনে আনিয়েছিলেন বলে বলেছিলেন। এমনিতে ভালো ছেলে হিসেবেই পরিচিত হুমায়ুন দিনরাত ল্যাপটপে পড়াশুনা নিয়েই থাকতেন। বাবা মোস্তাফিজুর তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করাতেই ছেলে আশিক এই কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

    হুমায়ুনের পিসতুতো দাদা কাজী আখতার আলিও জানান আগের দিন আশিকের কাছে ছুরি থাকার কথা। তিনি আরও জানান, ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিল আশিক।  দিল্লিতে চাকরি পাওয়ার পর মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন। কিন্তু কারও সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতেন না। একাই ঘরে বসে থাকতেন। সেই মেধাবী ছেলে যে এমন নৃশংসভাবে বাবা-মাকে খুন করে দেহ বাইরে টেনে এনে ফেলবে ভাবতেও পারছেন না তাঁরা।

    হতভম্ব আত্মীয় থেকে পড়শিরা

    পিসি রিনা চৌধুরী জানান, যাদবপুরে বি.টেকে ভালো ফল করেছিলেন আশিক। সেই সময় সেখান থেকেই ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরি পেয়ে যায় ভালো কোম্পানিতে। টাকাপয়সা পেয়ে ধর্মীয় স্থানে বা গরিবদের দানও করে দিতেন আশিক। সেই ছেলে যে এহেন কাণ্ড ঘটাতে পারেন, কল্পনাও করতে পারছেন না তিনি। তবে পিসি এও জানান যে, ছেলের মানসিক সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তাঁর বাবা।

    যাদবপুর থেকে বিটেক পাশ হুমায়ুন ওরফে আশিক পড়তে পড়েতই চাকরি পেয়ে যায় বড় কোম্পানিতে। তার আগে বর্ধমান শহরে থেকেই পড়াশোনা করত। সম্পন্ন ঘরের ছেলেটি বরাবরই মেধাবী ছিল।

     

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)