• বাঁশের মাচায় চেপে হাসপাতালে যাচ্ছে রোগী? ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই রাস্তা সারানোর তোড়জোড়
    এই সময় | ৩০ মে ২০২৫
  • বাঁশের মাচায় রোগীকে চাপিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। আজ থেকে ২৫ বছর আগের দৃশ্য নয়। এ ঘটনা একেবারে টাটকা, ২০২৫ সালের পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার বাছড়াকুন্ডু গ্রামের। সেই দৃশ্যের ভিডিয়ো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। আর তা দেখার পরেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠছিল হাজার প্রশ্ন। যখন ভারত চন্দ্রযান পাঠিয়ে যখন বিশ্ব রেকর্ড গড়ছে, সেই সময়ে কেন রাস্তাঘাটের এই হাল? প্রশ্ন ছুড়েছিলেন নেটিজ়েনদের একাংশ। এই ভিডিয়ো সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন।

    দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজ নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই গ্রাম। অভিযোগ, গ্রামে ঢুকতে বা বেরোতে হলে নদীবাঁধের দু’দিকের কাঁচা রাস্তাই ভরসা।

    হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে বা গ্রাম থেকে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে তাই বাঁশের মাচায় চাপিয়েই ঘাটাল-মেদিনীপুর রাজ্য সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। কারণ, বাছড়াকুন্ডু থেকে বালিপোতা-তেঁতুলতলা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে সামান্য বৃষ্টি হলেও বাইক বা সাইকেলে যাওয়া যায় না।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের লক্ষ্মণ দোলুইয়ের ছেলে বছর ২০-র সুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বাধ্য হয়েই তাঁকে বাঁশের মাচায় করে নিয়ে যেতে হয় রাজ্য সড়কে। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার সময়ে গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা থাকে নৌকা বা ডিঙ্গি। আর রাস্তায় কাদা তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তোলে। তাঁদের আক্ষেপ, বার বার এই রাস্তার হাল ফেরানোর দাবি তুলেও কাজ হয়নি।

    গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে শুক্রবার দুপুরে দাসপুর-১নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার পাত্র ‘এই সময় অনলাইন’-কে বলেন, ‘বালিপোতা-তেঁতুলতলা থেকে বাছড়াকুন্ডু পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ওই রাস্তার জন্য ২০১৮-১৯ সালে একবার অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। বাছড়াকুন্ডু গ্রাম থেকে ২০০-৩০০ মিটার রাস্তা হয়েও যায়। তারপরই জমিজট তৈরি হয়। এলাকাবাসীদের একাংশ বাধা দেন। যদিও জট কাটিয়ে আমরা একটি সরকারি মাঠের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিই। তাতেও বাধা দেওয়া হয়। শেষে টাকা ফেরত চলে যায়। আমরা গত বছরই ওই গ্রামে ঢোকার রাস্তায় কালভার্ট তৈরি করে দিয়েছি। বিকল্প একটি কংক্রিটের রাস্তাও আছে। তবে একটু ঘুরপথে দাসপুরে যেতে হয়।’

    যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘বিকল্পপথে লঙ্কাগড় যাওয়ার রাস্তার একাংশ কাঁচা। অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি ঢোকানো সম্ভব নয়।’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা দ্রুত এই রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করতে আবারও জেলা পরিষদের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কুমারেশ ভুঁইয়া বলেন, ‘এই এলাকায় প্রতি বছর বন্যা হয়। যে রাস্তার কথা বলা হচ্ছে তা আগে রাস্তা ছিল না। ২০১৮-১৯ সালেই তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জমিজটের কারণে রাস্তার কাজ শেষ করা যায়নি। সীমিত ফাণ্ডের মধ্যেই গতবছর ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি কালভার্টও করেছি। অসম্পূর্ণ ওই রাস্তার বিষয়েও আমরা ফের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

    দাসপুর-১ নং ব্লকের বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘লঙ্কাগড়-জলহরি হয়ে একটি কংক্রিটের রাস্তা আছে। এই রাস্তাটিও যাতে দ্রুত হয় আমরা সেই উদ্যোগ নিচ্ছি। জেলা পরিষদের তরফে অর্থ বরাদ্দ না হলেও আমরা পঞ্চায়েত সমিতির ফাণ্ড থেকেই তা পূরণ করার চেষ্টা করব।’

    এই বিষয়ে ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘আমিও ওই ভিডিয়ো দেখেছি। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি তথা ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও করছি। যাতে অতি দ্রুত এই রাস্তার কাজ শুরু করে দেওয়া যায়, সেই উদ্যোগ নিচ্ছি।’

  • Link to this news (এই সময়)