• তুলসির নির্যাস তৈরির ব্যবসা, ৫০ জনের সংসার চালান ভীমা
    এই সময় | ৩০ মে ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    উদ্যোগী মানেই তাঁকে বড় কারখানা বানাতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। তাই বলে প্রত্যন্ত পাহাড়ের কোণে সরকারি ঋণ নিয়ে ছোট্ট কারখানা করে পঞ্চাশটি পরিবারের আয়ের সংস্থান? কালিম্পংয়ের কাগে গ্রামের ভীমা ভট্টরাই এমনটাই করে দেখিয়েছেন।

    কালিম্পং থেকে কাগে গ্রাম বহু দূর। কালিম্পং থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পেডং। সেখান থেকে আরও ১৪ কিলোমিটার গেলে কাগে গ্রাম। এলাকার বাসিন্দাদের মূল পেশা চাষাবাদ।

    পাশাপাশি, পাহাড়ের কালিম্পং এমন একটি এলাকা যেখানে আয়ুর্বেদের এখনও চর্চা হয়। স্থানীয় মানুষ প্রতিদিনের অসুখ-বিসুখ সারাতে হাসপাতালের চেয়ে আয়ুর্বেদেই বেশি ভরসা রাখেন। তার চেয়ে বেশি ভরসা রাখেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে। কে না জানে, তুলসি গাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

    করোনা যখন রক্তবীজের মতো দেশে ছড়াচ্ছে তখন কালিম্পংয়ের বাসিন্দাদের বাঁচিয়েছে এই তুলসি। বছর চল্লিশের পাহাড়ি মহিলা তুলসির আরক (রস)-এর কারখানা তৈরি করেছেন। তুলসি পাতার নির্যাসকে প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষণ করে বোতলবন্দি করার পরে সেটি বিক্রি করেন তিনি। গোটা দেশে রাজ্য সরকারে বিশ্ববাংলার স্টলে বিক্রি হয় তাঁর প্রডাক্ট। কারখানায় কাজ করেন পঞ্চাশ জন কর্মী।

    শুধু আরক বা নির্যাস নয়, তুলসি চা-ও তৈরি করেন ভীমা। তুলসি গাছের শুকনো পাতা চায়ের মতোই গরম জলে ভিজিয়ে পান করা যায়। সেটিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে মহৌষধ।

    ভীমার কারখানায় বছরে ১০ হাজার লিটার তুলসি আরক তৈরি করা হয়। প্যাকেট করে সেই তুলসি আরক চলে যায় নানা প্রান্তে। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিগমের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ভীমা বলেন, ‘গোটা দেশের যে কোনও প্রান্তে তুলসির আরক তৈরি করা যেতে পারে। তবে তুলসির গুণ সম্পর্কে আরও প্রচার দরকার। তাতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনই বহু প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।’

    এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই, রাতারাতি তুলসির আরক বানানোর কারখানা তৈরি করেছেন ভীমা।

    কালিম্পংয়ের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তুলসির আরক বানাতে জানেন। চাষাবাদে আয়ের সংস্থান ক্রমশ কমছে দেখে ২০১৫ সালে তিনি তুলসি আরক তৈরি করার পরে বিক্রি করতে শুরু করেন। সরকারি মেলায় যেতেন সে সময়ে। কিছু বিক্রি হতো। বাকিটা ফিরিয়ে আনতেন।

    ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে তুলসি আরকের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। খাদি গ্রামোদ্যোগ ভীমার তুলসি আরকের মান দেখে খুশি হয়ে ঋণ দিতে সম্মত হয়। খাদির ২৪ লক্ষ টাকার সঙ্গে নিজের পুঁজি খরচ করে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে কারখানা তৈরি করেন গ্রামে।

    গ্রামের মহিলা ও পুরুষদের নিয়ে তৈরি করেন ‘হিমালয়ান গ্রামীণ উদ্যোগ’ নামে সংগঠন। যেখানে তুলসির আরক ও চা তৈরির জন্য প্যাকেজিং ইউনিট, সোলার ড্রায়ার রয়েছে। গ্রামের চাষিদেরও তুলসি চাষ শেখানো হয়। এখনও বছরে ২-৩ লক্ষ টাকার বেশি লাভের মুখ দেখেননি তাঁরা।

    কিন্তু তুলসির আরকের মতো সামান্য ব্যবসায় যে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব সেটা বুঝে গিয়েছেন ভীমা। তাঁর স্বামী পেশায় স্কুল শিক্ষক কৃষ্ণ ভট্টরাই বলেন, ‘প্রচার বাড়লে কুটির শিল্প হিসেবে অনেকেই এই কাজে নামতে পারবেন।’

  • Link to this news (এই সময়)