এই সময়: অভিযোগ জানানো হয়েছিল সাত বছর আগে, ২০১৮–র অগস্টে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থা ও অশালীন আচরণের অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর কলেজের এক মহিলা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
কলেজের তৎকালীন আইসিসি (ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করে। এর বিরোধিতায় আদালতেও যান অভিযুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি ওই শিক্ষকের বদলে অভিযোগকারিণীকেই দোষীসাব্যস্ত করেছে কলেজের নবগঠিত আইসিসি! তাঁর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সুপারিশ মেনে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শিক্ষিকাকেই সেন্সর করেছেন কলেজের প্রশাসক। অর্থাৎ, তিনি কোনও বিষয়ে মুখ খুলতে পারবেন না। এমনকী তাঁর সঙ্গে কেউ অন্যায় আচরণ করলেও মুখ বন্ধ রাখতে হবে। এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষিকা।
কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, পারস্পরিক বিবাদে যৌনহেনস্থার রং লাগিয়েছেন অভিযোগকারিণী। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেওয়া হয়েছে আইনজীবীদের পরামর্শ।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো ই–মেলে অভিযোগকারী শিক্ষিকা লিখেছেন — ‘কর্মক্ষেত্রে অশালীন আচরণের অভিযোগ জানানো ও এর প্রতিবাদ করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকেই শাস্তি দিয়েছেন। কারণ, আমি সাত বছর ধরে কোনও আপস করিনি। কলেজ কর্তৃপক্ষের সেন্সরের জেরে যে কেউ আমার সঙ্গে অভব্যতা বা অশালীন আচরণ করলেও প্রতিবাদ জানাতে পারব না! এই শাস্তি বেনজির।’
তাঁর দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক কলকাতা হাইকোর্টে গেলেও আইসিসি–র কাছেই বিষয়টি বিচারের জন্য পাঠায় আদালত। এর পরেও তাঁকে কেন শাস্তি দেওয়া হলো, সে প্রশ্ন তুলছেন অভিযোগকারিণী।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রিপোর্ট দিয়ে বর্তমান আইসিসি জানায়, কলেজে ঝগড়ার ঘটনায় ইচ্ছে করে ‘যৌন হয়রানির’ রং লাগানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসক মধুমিতা মান্না গত ১৯ মে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লিখিত ভাবে তাঁকে আইসিসি–র রিপোর্টের কথা জানান।
সেখানে প্রশাসকের বক্তব্য — ‘পশ (POSH) আইন অনুযায়ী কোনও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষিকার অভিযোগ সম্পূর্ণ বিদ্বেষপূর্ণ। এর পরিণতি কতটা গুরুতর হতে পারে, তা জেনেও আইসিসি–র দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযোগকারিণী। এই প্রেক্ষাপটে বিধি মেনে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য পরিচালন সমিতিকে সুপারিশ করে আইসিসি। তাই তাঁকে সেন্সর করা হলো।’
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অর্ডার মেনে গত বছরের ১ অক্টোবর নতুন আইসিসি গঠিত হয়। সেই কমিটির এক্সটার্নাল মেম্বার অন্যন্যা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তীও জানান, নিরপেক্ষ ভাবে সবদিক খতিয়ে দেখে, সকলের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত ও সুপারিশ করা হয়েছে। প্রশাসক বলেন, ‘বেশি কিছু বলার এক্রিয়ার আমার নেই। তবে তদন্ত শেষে আইসিসি যে সুপারিশ করেছিল, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই তা কার্যকর করা হয়েছে।’
এই সূত্রেই অভিযোগকারিণী জানাচ্ছেন, তৎকালীন আইসিসি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে। এবং তার পরে অভিযুক্ত আদালতে যান। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন — ‘আইসিসি গঠনে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষকের আইনজীবী।
যার প্রেক্ষিতে নতুন করে আইসিসি গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কোর্ট। কিন্তু আমার অভিযোগ ভুল বলেনি বা অস্বীকার করেনি। তা সত্ত্বেও বর্তমান আইসিসি আগের সব রিপোর্ট, সাক্ষ্য ও প্রমাণ অস্বীকার করে আমাকেই দোষীসাব্যস্ত করে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি দিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নিরন্তর কটাক্ষের মুখে পড়ছি।’