মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের এক চাকরিহারা শিক্ষক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আমাইপাড়া উদ্বাস্তু বিদ্যাপীঠের ইংরেজির শিক্ষক প্রবীণ কর্মকার বুধবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বয়স মাত্র ৩৩ বছর। বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ শহরের হরিদাসনগর পল্লিতে। বাড়িতে ৭২ বছরের মা ও বাবা। ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের চাকরিহারা ওই শিক্ষকের কিডনির অসুখ ছিল।
তাঁর পরিবারের দাবি, টিভি-র সান্ধ্য খবরে আবার পরীক্ষা দিতে হবে শুনেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। অসুস্থ লাগলেও এক ফাঁকে মায়ের বিছানা করে দিয়েছিলেন প্রবীণ। ওঁর দাদা বলেন, ‘‘ভাই বলছিল, মাথা ঘুরছে। ঝাপসা দেখছি। বাথরুমে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।’’ বাড়ি থেকে ১০ মিনিট দূরে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রবীণকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়।
যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের প্রতিনিধিরা অবশ্য এখনও পরীক্ষা না-দিতে অনড়। আইনি পথে তাঁদের পুনর্বহাল করার দাবিতে আজ, শুক্রবার শিয়ালদহ থেকে নবান্নমুখী মিছিলের ডাক দিয়েছেন। বেলা ১১টায় তাঁরা শিয়ালদহে জড়ো হবেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরিহারারা মিছিলে যোগ দেবেন। আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার এবং আদালত কারও কাছ থেকে বিচার না পেয়ে আমাদের সর্বস্বান্ত দশা। মিছিলে আমাদের পোশাকে সেই অবস্থাই ফুটে উঠবে।’’
প্রবীণের পরিবারের শোকগাথা এ দিন বিকাশ ভবনে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের অবস্থানস্থলে ঘুরে ফিরে আসে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওই সংগঠনের অন্যতম মুখ মেহেবুব মণ্ডল জানান, প্রবীণ ওয়াই চ্যানেলে তাঁদের অবস্থানে এসেছিলেন। তবে কিডনির অসুখ বলে রাতে বাড়ি চলে যেতেন। মেহেবুবের কথায়, ‘‘মাইনে বন্ধ হলে কী ভাবে চিকিৎসা হবে তা নিয়ে উনি (প্রবীণ) খুব টেনশনে ছিলেন। মাঝেমধ্যেই বলতেন, চাকরি পেয়েও কেন আমাদের একই পরীক্ষা বার বার দিতে হবে?’’ আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনেকেরই মত, দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠাই অসুস্থ প্রবীণের মৃত্যু এত দ্রুতডেকে আনল।
প্রবীণের বিষয়ে একই কথা বলেছেন তাঁর প্রতিবেশী শিক্ষিকা কেকা রায়ও। তিনি বলেন, ‘বেতন বন্ধ হয়ে গেলে নিজের অসুখের চিকিৎসার কী হবে, তা নিয়ে প্রবীণের চিন্তা ছিল।’’
তিন ভাইয়ের মধ্যে প্রবীণই ছিলেন একমাত্র সরকারি চাকুরে। ইংরেজিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর, শেষে বিএড করে ২০১৯ সালে তিনি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে আমাইপাড়া হাইস্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। জিয়াগঞ্জেই ভাড়া থাকতেন। প্রবীণের মা রেখা কর্মকার জানান, দু’বছর চার মাস আগে তাঁর ছেলের ডায়ালিসিস শুরু হয়। ছেলের অসুস্থতার জন্য মা-ও ছেলের কাছে থাকতে শুরু করেন। রেখা বলেন, ‘‘ডায়ালিসিস চললেও আমার ছেলেকে দেখে বোঝা যেত না, ও অসুস্থ। তবে চাকরি খুইয়ে ফের ফের পরীক্ষা দিতে হবে শুনে ওর অস্থিরতা বেড়ে যায়। মাঝেমাঝেই বলত, ‘অসুস্থ শরীরে আমি কি পারব পরীক্ষা দিতে?’’
চিন্ময় জানান, তাঁদের মঞ্চে আরও বেশ কয়েক জন অসুস্থ শিক্ষক আছেন। ব্রেন স্ট্রোক হয়ে একটা দিক অসাড় হয়ে গিয়েছে এমন শিক্ষকও আছেন। আছেন অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা। ফের পরীক্ষা দিতে হবে শুনে অনেকেই মানসিক চাপে আরও বেশি অসুস্থহয়ে পড়ছেন।
সবারই একই প্রশ্ন, প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির জন্য কেন আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে?