এই সময়, পুরুলিয়া: এলাকায় খুলেছে মদের দোকান। দেদার বিক্রি হচ্ছে মদ। তাতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামাজিক এবং পারিবারিক পরিবেশ। মাতালদের উপদ্রবে মহিলাদের পক্ষে রাস্তায় নিরুপদ্রবে চলাফেরা করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুকুর ঘাট, খেলার মাঠ থেকে চাষের জমি, যেখানে সেখানে পড়ে থাকছে মদের বোতলের ভাঙা টুকরো। ধারাল কাচে পা কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তার জেরে বৃহস্পতিবার জনরোষ আছড়ে পড়ল একটি মদের দোকানে।
ভাঙচুর চালিয়ে পুরুলিয়া মফস্বল থানার লালবাজার গ্রামের অদূরে পাঁড়েডি-চয়নপুর রাস্তার ধারে ওই দোকানে আগুন লাগিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা, যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা। আর একটি ঘটনায় এ দিনই অবিলম্বে অবৈধ মদ বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বলরামপুর বিডিও দপ্তরের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান ব্লকের রাঙ্গাডি গ্রামের হেমালপাড়া এলাকার মহিলারা।
লালবাজারের ঘটনায় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই দোকানটি কমবেশি বছর খানেক চালু হয়েছে। তার পর থেকেই মাতালদের উপদ্রবে এলাকার মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষা করে চলাফেরা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন স্তরে বলেও লাভ হয়নি।
জানা গিয়েছে, এদিন চয়নপুর, গোলামারা, মহুদা, লালবাজার, জলদুয়ার প্রভৃতি গ্রামের মহিলারা লালবাজার গ্রামের একটি জায়গায় জড়ো হন। অনেকের সঙ্গেই এসেছিলেন তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও। সেখানে থেকেই মিছিল শুরু হয়। অনেকের হাতেই ছিল লাঠি।
মিছিল করে গিয়ে দোকানটি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। তা নিয়ে বচসা শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই মূলত মহিলারা দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আন্দোলনকারীদের অবরোধের জেরে প্রথমে ঢুকতেই পারেনি। পরে অবশ্য দমকলের ইঞ্জিনটি আগুন আয়ত্তে আনে।
হেমালপাড়ার মহিলাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলা বেআইনি মদ বিক্রির ব্যবসার ফলে নারীদের নিরাপত্তা, শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং পারিবারিক শান্তি সবই ব্যাহত হচ্ছে। বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভ না হওয়ায় তাঁরা বলরামপুর বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হলেন।
এর আগে তাঁরা এই বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, আবগারি দপ্তর ও থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়া না–হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন।
জেলা আবগারি দপ্তরের অতিরিক্ত সুপার প্রতাপ সরকার বলেন, পুরুলিয়া মফস্বল থানার একটি গ্রামে একটি পানশালা ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের স্থানীয় তৃণমূল সদস্য প্রভাসচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘কেন দোকানটির উপর জনরোষ আছড়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’ মদের দোকানটি নিয়ে এলাকার এই ক্ষোভের কথা জানা ছিল কি না, সেই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি।’