এই সময়, ভাঙড়: রাত পোহালেই জামাইষষ্ঠী। জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়িরা মাছ-মাংসের সঙ্গেই পাত সাজিয়ে দেবেন আম, কাঁঠাল, লিচুর সম্ভারে। বাজারে এখন বিপুল চাহিদা হিমসাগর আমের।
কলকাতার পাতে রসালো মিষ্টি হিমসাগরের বেশিরভাগটাই যোগান দেয় ভাঙড়। ফি বছর ভাঙড় থেকেই সুস্বাদু হিমসাগর আম যায় কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে। গত বছর অল্প ফলনে সেই সাপ্লাই চেনে ব্যাঘাত ঘটলেও, এ বছর আমের বিপুল ফলনে মুখে হাসি চাষিদের।
জামাইষষ্ঠীর বাজারে আমের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এ বছর কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়ায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির ভাঙড়, ক্যানিং, সোনারপুর, রাজারহাটে আমের রেকর্ড ফলন হয়েছে বলে খবর উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে।
এই মুহূর্তে বাজারে ভালো সাইজের হিমসাগর আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে প্রবল গরম থাকায় গাছেই পেকে গিয়েছে প্রচুর আম। ক্ষতি বাঁচাতে এখনই বেশিরভাগ গাছ থেকে ডাঁসা আম পেড়ে নেওয়ার তোড়জোড় চলছে জেলাজুড়ে।
এই মুহূর্তে জেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। খোলা বাজারে সেই আমের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গাছপাকা আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা প্রতি কেজি।
ভাঙড়ের দু’টি ব্লক ছাড়াও উত্তরের রাজারহাট, বসিরহাট, বারাসত, বনগাঁ, হাড়োয়া, স্বরূপনগর, দেগঙ্গা এবং দক্ষিণের সোনারপুর, বারুইপুর ও ক্যানিং, জয়নগর, বিষ্ণুপুর ব্লকে অসংখ্য আমবাগান আছে।
কিন্তু ভৌগোলিক কারণে ও মাটির উর্বরতার জন্য ভাঙড়ের দুই ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের হিমসাগর, ল্যাংড়া, কিষানভোগ, আম্রপালি আমের স্বাদই আলাদা। ফি বছর গোটা কলকাতা সহ হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমানের মানুষের মুখে হাসি ফোটায় ভাঙড়ের আম।
ভাঙড়ের আমচাষি শাহিদ মোল্লা বলেন, ‘এ বছর রেকর্ড ফলন হয়েছে। আমরা আম ভেঙে উঠতে পারছি না।’ হালতুর বাসিন্দা সুপর্ণা পাল বণিক বলেন, ‘এ বছর বাজারে গেলেই সস্তায় আম মিলছে। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে দু–কেজি হিমসাগর কিনেছি।’ আম ব্যবসায়ী গোপাল পাল বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত বিক্রি যা হয়েছে তাতে আমরা লাভের মুখ দেখছি।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষি ও উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে খবর, ভাঙড়ের দুই ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর আমবাগান আছে। যেখান থেকে কয়েক হাজার কুইন্টাল কাঁচা আম পেড়ে তা কারবাইডের সাহায্যে পাকিয়ে কলেজ স্ট্রিট, শেওড়াফুলি, ধূলাগড়ে বিক্রি করা হয়। কিছু আম আবার প্যাকেটজাত হয়ে ভিন রাজ্যেও চলে যায়। সোনারপুরের ফল ব্যবসায়ী লক্ষীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘এখন তরমুজা আম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
ভাঙড়–১ ব্লকের বিডিও প্রিয়াঙ্কা বালা বলেন, ‘ধান, সব্জির পর ভাঙড়ের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো আম। এ বছর হিমসাগর আমের ফলন খুব ভালো হয়েছে। চাষিরা লাভ পাচ্ছে।’