এই সময়, মেদিনীপুর: রক্তদান শিবির করেই রক্তযোদ্ধাকে স্মরণ করেন ওঁরা। গত কুড়ি বছর ধরে এই বিশেষ কারণে নজর কেড়েছে চন্দ্রকোণার বাঁকা গ্রাম। ২০০৫ সালের ২৯ মে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বিবেকানন্দ করণ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির। তাঁর অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন স্ত্রী চন্দনা করন।
তারপর ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর স্বামীর মৃত্যুদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন তিনি।
বিবেকানন্দ ছিলেন একজন সমাজসেবী ও রক্তদান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ২১ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চন্দ্রকোণা রোড থেকে ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে আঁধারনয়নের কাছে বিবেকানন্দর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গুরুতর জখমে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। সময় মতো রক্ত না-মেলায় হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার পরে চন্দনা পণ করেন, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন স্বামীর মৃত্যুদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। সেই থেকে প্রতিবছর ২৯ মে বাড়ির উঠোনেই আয়োজন করা হয় ‘রক্তে স্মৃতিতর্পণ’। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার মানুষ রক্তদান করেন।
বর্তমানে এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিবেকানন্দের মেয়ে সোমদত্তা। ২০২২ সাল থেকে তিনি নিজেও রক্ত দিতে শুরু করেন। কলেজ পড়ুয়া সোমদত্তা বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর সময়ে আমার বয়স ছিল আড়াই বছর। বড় হয়ে সকলের মুখেই শুনেছি, বাবা এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, রক্তদানের জন্য দৌড়ে বেড়াতেন। আমিও তাঁর পথেই হাঁটছি।’
বৃহস্পতিবার শিবিরে ৪৭ জন রক্তদান করেছেন। রক্ত সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের একটি দল। স্বেচ্ছা রক্তদান সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক তনুপ ঘোষ জানান, পারিবারিক উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই শিবির জেলায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।