• ‘কিছু করুন স্যর’, গোপন চিঠিতে আকুতি মহিলার
    এই সময় | ৩০ মে ২০২৫
  • গ্রামে বিডিও এসেছেন। তাঁকে ঘিরে জমাট বাঁধছে থিকথিকে ভিড়টা। কেউ বলছেন, ‘স্যর, ভাতাটা এখনও পাচ্ছি না।’ কারও আর্জি, ‘আবাসের ব্যাপারটা একটু দেখবেন সাহেব।’

    ওই ভিড় থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এ সবই দেখছিলেন এক মহিলা। হাতের মুঠোয় কী যেন একটা ধরে রেখেছেন। সাবধানে। ভাবখানা এমন, কেউ যেন দেখে না-ফেলে। ভিড়টা একটু ফিকে হতেই চারপাশটা সতর্ক দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে তিনি সটান পৌঁছে গেলেন বিডিও-র কাছে।

    ‘স্যর, এই খামে একটা চিঠি আছে। কিন্তু দোহাই, এখানে পড়বেন না। বাড়ি বা অফিসে ফিরে খামটা খুলবেন। আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। কিছু একটা করুন স্যর’, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন সেই মহিলা।

    তারপরে ফের মিশে গেলেন লোকজনের মধ্যে। তমলুকের বিডিও ওয়াসিম রেজা ততক্ষণে আক্ষরিক অর্থেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে পরের কর্মসূচিতে যোগ দেন।

    বিডিও ওই মহিলার কথা রেখেছেন। চিঠিটা সবার সামনে খোলেননি। তবে এমন ঘটনায় প্রথমে একটু অবাক হলেও চিঠিটা পড়ার পরে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত। বলছেন, ‘এ ভাবেও যে কেউ নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন, এটা ভেবে বেশ ভালো লাগছে। অনেকেই অনেক ভাবে সমস্যার কথা জানান। তবে এমন অভিনব ঘটনা আমার সঙ্গে এই প্রথম ঘটল। ওই মহিলা যে সমস্যার কথা জানিয়েছেন তা তদন্ত করে শিগ্‌গির পদক্ষেপ করব।’

    বিডিও জানান, শৈশালী ৫ নম্বর পাড়ার মহিলাদের তরফে লেখা চিঠিতে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় একটি বেআইনি মদের দোকান আছে। ওই মদের দোকানের কারণে প্রত্যেক বাড়িতে অশান্তি হচ্ছে।

    ‘প্লাস্টিকমুক্ত’ গ্রাম গড়তে রাজ্যের বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। সচেতনতা বাড়াতে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বিডিওরা। তমলুকের বিডিও ওয়াসিম রেজাও মঙ্গলবার তেমনই একটি কর্মসূচিতে বিষ্ণুবার ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন।

    সেখানেই ওই মহিলা তাঁর হাতে চিঠি ধরিয়ে দেন। বিডিও বলছেন, ‘জনসংযোগ বাড়ানো, মানুষের সমস্যা জেনে তার সমাধান করাটাই আমাদের কাজ। সে কাজে আমরা যে সফল তা কিন্তু এই চিঠিটাই প্রমাণ করছে। প্রান্তিক ওই মহিলা বিশ্বাস করেন, সরকারি আধিকারিকদের সমস্যার কথা জানালে তার সমাধান হয়। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।’

  • Link to this news (এই সময়)