এই সময়: বঙ্গোপসাগরের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করেছিল বুধবার রাতের পর থেকেই। সমুদ্রে তৈরি গভীর নিম্নচাপটি ক্রমশ শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘণ্টায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে, অর্থাৎ স্থলভাগের দিকে এগোতে শুরু করেছিল।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই গভীর নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। তার দু’ঘণ্টা পরে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির অল্প দূর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা মোটের উপর শুকনো ছিল, তবে বিকেল গড়াতে না-গড়াতেই বৃষ্টি শুরু হয়। তখন রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল।
এহেন পরিস্থিতিতে দক্ষিণবঙ্গে কোনও বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কায় সবার নজর যখন বঙ্গোপসাগরে আটকে, ঠিক সেই সময়েই কিছুটা চুপিসাড়ে রাজ্যে ঢুকল বর্ষা। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির রেকর্ড বলছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এত আগে বাংলায় বর্ষার আগমন ঘটেনি।
ভারত ভূখণ্ডে জলীয় বাষ্পে ভরা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রদেশের ‘সরকারি’ তারিখ ১ জুন। কিন্তু এ বছর তার ৮ দিন আগে, ২৪ মে কেরালায় বর্ষা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের অন্য একটি শাখা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে এগিয়ে স্থলভাগে প্রবেশের পর উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যেও বর্ষা নামিয়েছে কিছু দিন আগেই। তার পর বাংলায় বর্ষা কবে প্রবেশ করবে, তার অপেক্ষা ছিল। বৃহস্পতিবার সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটল।
আলিপুর হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া অতি গভীর নিম্নচাপটি সমুদ্র ছেড়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার পর থেকেই প্রাকৃতিক নিয়মে শক্তি হারাতে শুরু করবে। এ রকম ওয়েদার সিস্টেম যতক্ষণ সমুদ্রে থাকে, ততক্ষণ তার জলীয় বাষ্প সংগ্রহে কোনও সমস্যা হয় না।
কিন্তু স্থলভাগে প্রবেশের পর আর জলীয় বাষ্পের জোগান থাকে না বলে যে কোনও ‘সিস্টেম’-ই শক্তি হারাতে শুরু করে। বৃহস্পতিবারের অতি গভীর নিম্নচাপও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে শক্তি হারালেও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির আবহ বজায় থাকবে কাল, শনিবার পর্যন্ত।
ওই সময় পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অতি গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্র-শনি দু’দিনই সমুদ্র উত্তাল থাকবে বলে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ, শুক্রবার ও কাল, শনিবার দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জায়গাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও কোনও জায়গায় ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির আবহ বজায় থাকবে পরশু, রবিবার পর্যন্ত। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, আজ, শুক্রবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবারও রাজ্যের উত্তর দিকের জেলাগুলোয় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব বেশি। সেখানে রবিবারও বৃষ্টি হবে।