• ১১১ BLO বাদ, শুধু সরকারি কর্মীরাই ভোটার লিস্টের দায়িত্বে
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    ভোটার তালিকায় গরমিল নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে রাজ্য জুড়ে। যা মোকাবিলায় শনিবারই সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।

    এই আবহে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের নির্দেশে আসানসোল দক্ষিণ ছাড়া সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকার কাজের সঙ্গে যুক্ত মোট ১১১ জন বুথ লেভেল অফিসারকে একলপ্তে সরিয়ে দেওয়া হলো।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি বা আধা সরকারি কর্মী ছাড়া আর কাউকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কেন? আসানসোলের মহকুমাশাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘আরও নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

    নির্বাচন কমিশনের তরফে এই নির্দেশ জারি হয়েছে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর। এতদিন পরে কেন তা কার্যকর করা হলো, তা নিয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি।

    মাসখানেক আগেও ভুয়ো ভোটার নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ভোটার তালিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভূতুড়ে ভোটার’ খুঁজতে আসরে নামে শাসকদল তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

    এমনকী একাধিক জেলায় ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি ভোটারের নাম পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবারই ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম ঢোকানোর চেষ্টার অভিযোগে দুই সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় এ ভাবে একের পর এক কারচুপির অভিযোগ সামনে আসার পরেই কি বিএলও–দের সরিয়ে দেওয়া হলো? উঠেছে এই প্রশ্ন।

    জানা গিয়েছে, এতদিন সরকারি কাজের সঙ্গে যুক্ত আইটি রিসোর্স ও ভিলেজ রিসোর্স পার্সন, যাঁরা টিকাকরণের কাজ করেন, সেল​্ফ হেল্প গ্রুপের সার্ভিস প্রোভাইডাররা বিএলও হিসেবে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করতেন। এঁদের অনেকেই গত কয়েক বছর ধরে এই কাজটিই করে এসেছেন।

    তবে এখন যাঁরা এই কাজ করবেন সেই ১৩ ধরনের সরকারি বা আধা সরকারি কর্মীর একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন শিক্ষক–শিক্ষিকারা। রয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পঞ্চায়েত সচিব, ইলেকট্রিক বিল রিডার, ডাক বিভাগের কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, মিড-ডে মিল কর্মীরা।

    পশ্চিম বর্ধমান জেলায় যে ১১১ জন বিএলও-কে সরানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে শুধু বারাবনি বিধানসভাতেই ৪৯ জনকেই পরিবর্তন করা হয়েছে। সালানপুর ব্লকে ৩১, বারাবনি ব্লকে ১৮, জামুড়িয়ায় ২১ জন, পাণ্ডবেশ্বরে ১৭ জন, আসানসোল উত্তরে ১৪ জনকে সরানো হয়েছে।

    এ ছাড়া কুলটিতে পরিবর্তন হয়েছেন চার জন, রানিগঞ্জে তিন জন, দুর্গাপুর পশ্চিমে দু’জন এবং দুর্গাপুর পূর্বে একজন। এ প্রসঙ্গে আসানসোলের মহকুমাশাসক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে ১৩টি ক্যাটাগরির সরকারি কর্মী ছাড়া বিএলও পদে কাউকেই রাখা যাবে না। সেই নির্দেশ জেলায় কার্যকর করতে গিয়েই একবারে এত জনকে সরাতে হয়েছে।’

    এ দিকে, রেলশহর চিত্তরঞ্জন সমেত পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে বরাবরই অভিযোগ উঠেছে, বদলির পরেও রেলকর্মী ও কয়লাখনি কর্মীদের নাম থেকে যায় এখানকার ভোটার তালিকায়। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় থাকার অভিযোগ তো রয়েছেই।

    যেমনটা বললেন চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার সিটু ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গুপ্ত। তাঁর অভিযোগ, ‘২০১৭ সালে আমার মা রঞ্জু গুপ্ত মারা যান। আমি তাঁর ভোটার কার্ডের সঙ্গে মৃত্যু শংসাপত্র জমা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ জানাই। কিন্তু নাম থেকে গিয়েছে। বেশ কয়েকবার অভিযোগ করার পরেও গত বছরেও দেখেছি, মায়ের নাম রয়েছে ভোটার তালিকায়।’

    রাজীব আরও বলেন, ‘গত লোকসভা ভোটে চিত্তরঞ্জনের ভোটার তালিকায় প্রায় ২২ হাজার নাম ছিল। কিন্তু ভোট পড়েছিল মাত্র ১০ হাজার। কারণ, বহু কর্মী চিত্তরঞ্জন থেকে বদলি হয়েছেন বা অবসর নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, অনেকেই মারা গিয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকা আপডেট করা হয়নি।’ একই ধরনের অভিযোগ করে কংগ্রেসের জেলা নেতা প্রসেনজিৎ পৈতুন্ডি বলেন, ‘আশা করা যায় নতুন বিএলও–রা এই সমস্যাগুলির সমাধান করবেন।’

  • Link to this news (এই সময়)