• আপনি না থাকলে পরিবার নিরাপদ তো?
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম

    একটি বেসরকারি সংস্থায় সদ্য চাকরি পেয়েছেন ঝাড়গ্রামের এক যুবক। তাঁর এক অগ্রজ সহকর্মী এসেছেন অরণ্য-শহরে। ওই যুবক মোটরবাইকে গিয়েছেন সেই সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে। মাথায় হেলমেট নেই দেখে সেই সহকর্মী জানতে চাইলেন, ‘কী ব্যাপার? তুমি কি হেলমেট পরো না?’

    অপ্রস্তুত ভাবটা সামলে যুবকের উত্তর, ‘আসলে হেলমেট পরে বাইক চালাতে খুব অস্বস্তি হয়। তাই।’ কথা শেষ করতে না-দিয়ে অগ্রজ বলেন, ‘বাড়ির অ্যালবামে পরিবারের সঙ্গে কোনও গ্রুপ ছবি আছে?

    থাকলে, সেখানে নিজের ছবিটা আঙুল দিয়ে ঢেকে বাকিদের মুখের দিকে তাকাবে। তারপরে নিজেকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি ছাড়া তোমার পরিবার কি নিরাপদ? উত্তরটা ‘না’ হলে এ বার থেকে হেলমেট পরবে।’ সেই ঘটনার পর থেকে ওই যুবক হেলমেট ছাড়া আর বাইকে ওঠেন না।

    ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘সমস্যাটা ঠিক এখানেই। বেশিরভাগ লোকজন মনে করেন, হেলমেট আইন বাঁচানোর একটা মাধ্যম ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু বিষয়টা আসলে জীবন-মৃত্যুর।’

    জেলা পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘গাড়ির ক্ষেত্রে সিট বেল্ট আর বাইকের ক্ষেত্রে হেলমেট- প্রাথমিক ভাবে লোকজন এই দু’টির কথাই ভাবেন। কিন্তু বাইক এবং গাড়ির কাগজপত্র ঠিক না-থাকলে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে কোনও বিমা মেলে না।’

    পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পথ দুর্ঘটনার মৃত্যু হলে প্রথমে মামলা রুজু হয় স্থানীয় থানায়। ময়নাতদন্তের পরে ডেথ সার্টিফিকেট, স্থানীয় বিডিও-র থেকে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর প্রমাণপত্র জমা দেওয়া হয় রাজ্য পরিবহণ দপ্তরে। সব নথি খতিয়ে দেখা হলে ক্ষতিপূরণের জন্য পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের নামের তালিকা পাঠানো হয়।

    তারপরে অর্থ বরাদ্দ হলে মৃতদের পরিবারের হাতে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সেই টাকা তুলে দেওয়া হয়। ঝাড়গ্রামের আরটিও অমিতকুমার দত্ত বলেন, ‘রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাইক বা গাড়ির কাগজপত্র ঠিক না থাকায় বিমা সংস্থা থেকে কোনও বিমা পান না ক্ষতিগ্রস্তরা। ফলে, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক রাখা খুব জরুরি।’

    ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিবহণ দপ্তর পথ দুর্ঘটনায় মৃত ২২ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪৪ লক্ষ টাকা দেবে বলে জানিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষেও পথ দুর্ঘটনায় মৃত ৩৯ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘দুর্ঘটনা রুখতে সচেতনতা শিবির, জরিমানা, আইনি পদক্ষেপ সবটাই করা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)