• নজরে ২৬ বিধানসভা ভোট, তৃণমূল এখনই ‘অ্যালার্ট মোডে’
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতে ৮–৯ মাস দেরি থাকলেও তৃণমূল এখনই খুব দ্রুততার সঙ্গে সংগঠনকে ভোটমুখী করতে শুরু করেছে। মে মাসের শেষ থেকে জুন–জুলাই মাসের মধ্যে জেলায় জেলায় ব্লক ও অঞ্চল স্তরে কর্মিসভা করে সংগঠনকে ২০২৬ সালের ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল।

    তৃণমূলের কোনও কোনও সাংগঠনিক জেলায় ব্লক স্তরে কর্মিসভা শুরু করে সেটা বুথ স্তরে নিয়ে গিয়ে শেষ করার পরিকল্পনা হয়েছে। আবার কোনও সাংগঠনিক জেলায় বুথ–অঞ্চল স্তরে কর্মিসভা শুরু করে ব্লক–বিধানসভা স্তর পর্যন্ত সেটা ছড়িয়ে দেওয়ার রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

    মূলত ২০২৬ সালের ভোটের দিকে তাকিয়ে এই প্রস্তুতি শুরু হলেও সামনেই যেহেতু ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ, তার জন্য সে দিকে তাকিয়েও এই পর্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রচার সেরে ফেলতে চলেছে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপে দু’টো লক্ষ্য পূরণ হবে।

    পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী যেমন মে মাসের শেষ থেকেই ব্লক ভিত্তিক কর্মিসভা শুরু করছেন। পশ্চিম বর্ধমানে বিধানসভা কেন্দ্র মোট ৯টি। ‘মিশন–৯ জয়’— এই স্লোগান তৈরি করে মঙ্গলবার এই জেলায় শুরু হয়েছে ব্লক ভিত্তিক কর্মিসভা।

    মে-জুন মাসে মোট ১৮টি কর্মিসভা করার নির্ঘন্ট তৈরি করেছেন তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, একাধিক সাংগঠনিক জেলায় বুথ কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে।

    তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব বুথ–অঞ্চল স্তরে কর্মিসভা করার পর ব্লক স্তরে কর্মিসভা করতে চাইছে। তৃণমূলের ওই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার বক্তব্য, ‘বুথ স্তরে কর্মিসভা শুরু করার পর আমরা ভোটার লিস্ট স্ক্রুটিনির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সেই কাজ শেষ হয়েছে। এ বার বুথ–অঞ্চল স্তরে কর্মিসভা শেষ করে জুন–জুলাই মাসে আমরা ব্লক স্তরে কর্মিসভা করব।’

    তৃণমূলের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘বুথ কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ, মুর্শিদাবাদ জেলায় আমরা অঞ্চল কমিটিকে বেশি গুরুত্ব দিই। কিছু দিনের মধ্যেই অঞ্চলে অঞ্চলে কর্মিসভা শুরু হবে।’

    সংগঠনকে নিচু তলা থেকে ‘অ্যালার্ট মোড’–এ নিয়ে যেতে তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা টানা ৩০ দিনের কর্মসূচি তৈরি করেছে। তৃণমূলের ওই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে টানা ৩০ দিনের কর্মসূচি। সেখানে বুথ–অঞ্চল–ব্লক ভিত্তিক কর্মিসভা এবং বর্ধিত কর্মিসভা হবে। ছাত্র–যুব–শ্রমিক সংগঠন ও বাকি সব শাখা সংগঠনের পৃথক কর্মসূচি চলবে।’

    তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা স্তরে রদবদল হয়েছে ১৬ মে। নির্বাচনী ও সাংগঠনিক পারফরম্যান্সের নিরিখে আগামী দিনে ব্লক–টাউন স্তরেও নেতৃত্বে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য কিছু কিছু সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব ব্লক সম্মেলন ও কর্মিসভা করার আগে একটু সময় নিতে চাইছেন।

    তৃণমূলের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কথায়, ‘ব্লক–টাউন সভাপতি রদবদলের সম্ভবনা রয়েছে। সেই রদবদল হওয়ার পর ব্লক–টাউনে সম্মেলন ও কর্মিসভা করলে কাজ করতে সুবিধে হবে।’ তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির যুক্তি, ‘বুথের সংগঠন হলো সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই, বুথে কারা সেনাপতি থাকবেন, সেটা আমরা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। বুথ সংগঠন অ্যালার্ট থাকলে ব্লক নেতৃত্বের কাজ সহজ হয়।’

    এহেন সাংগঠনিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে ২১ জুলাই সমাবেশের প্রচার কিছু দিন পর থেকেই পুরোদস্তুর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করবে জোড়াফুল। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘আমাদের জেলা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জামাই ষষ্ঠী, ইদ শেষ হলে বুথ–অঞ্চল–ব্লক–টাউন স্তরে সম্মেলন ও কর্মিসভা শুরু হবে। আগামী ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রচার চলবে, তার সঙ্গে ২০২৬–এর ভোটের দিকে তাকিয়েও প্রস্তুতি শুরু হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)