• ‘অযোগ্য’দেরই বেশি সুবিধে, অভিযোগ ‘যোগ্য’ কর্মহারাদের
    এই সময় | ২৯ মে ২০২৫
  • এই সময়: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই রাজ্যে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জট ছাড়াতে চাইছে সরকার। এ জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ঘোষণা করেছেন। তার পরেও কিন্তু বিতর্ক ও ক্ষোভ এড়ানো গেল না।

    একদিকে ‘যোগ্য’দের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার জেরে আদতে ‘অযোগ্য’রাই উপকৃত হবেন। অন্যদিকে, ‘অযোগ্য’দের মধ্যে যাঁরা ‘নট স্পেসিফিক্যালি টেন্টেড’, তাঁরা বুধবার সকালে সামিল হলেন কালীঘাট অভিযানে।

    বুধবারই আবার ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ জানিয়েছে, তাদের মহিলা প্রতিনিধিদল দল আজ, বৃহস্পতিবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।

    নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষার খুঁটিনাটি–সহ যাবতীয় তথ্য জানিয়ে শুক্রবার বিকেল চারটের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা স্কুল সার্ভিস কমিশনের। কিন্তু সে কাজ এগোনোর জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা বুধবার সন্ধে পর্যন্তও হাতে পাননি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।

    এরই মধ্যে ‘যোগ্য’ কর্মহারাদের বড় অংশ বলছেন, শিক্ষা–সহ একাধিক দপ্তরে নিয়োগের জন্য ‘অযোগ্য’রা আবেদন জানাতে পারবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। যার পাল্টা ‘যোগ্য’দের বক্তব্য, ‘সরকার প্রথম থেকেই অযোগ‍্যদের চাকরির নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যোগ‍্যদের বাঁচানোর চেষ্টা নেই! তাই আমাদের এমন অবস্থা।’

    এই পরিস্থিতিতেই আজ কালীঘাট অভিযানের ডাক তাঁদের। আন্দোলনকারী মঞ্চের মহিলা প্রতিনিধিরা জানান, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেয়েও ফের পরীক্ষায় বসা আসলে তাঁদের জন্য ‘লজ্জাজনক’। মমতাকে এ কথা জানাতে চান তাঁরা। যদিও আগাম অনুমতি না নেওয়ায় আজ তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত।

    কিন্তু ‘যোগ্য’রা, অর্থাৎ যাঁরা ফের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন, তাঁদের তো চাকরির অভিজ্ঞতার নিরিখে ‘অ্যাডভান্টেজ’ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে কি তাঁরা সন্তুষ্ট নন? আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, ওই বাড়তি সুবিধে পাওয়ার আগে তাঁদের লিখিত পরীক্ষার গণ্ডি টপকাতে হবে।

    যাঁরা ৭–৮ বছর কাজ করে ফেলেছেন, তাঁদের পক্ষে সদ্য পাশ করা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমের সুবিধের সঙ্গেই বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রচুর নম্বরের সুবিধেও পাবেন ‘ফ্রেশ ক্যান্ডিডেটরা’।

    কাজেই তাঁদের অভিজ্ঞতার জন্য ‘অ্যাডভান্টেজ’ দেওয়া হলেও তাতে দৌড়ে এগিয়ে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একই সঙ্গে এঁরা ফের জানিয়েছেন যে, চাকরির নিশ্চয়তা না পেলে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ সত্ত্বেও ‘সম্মান খুইয়ে’ স্কুলে যাবেন না।

    চাকরিহারাদের প্রতিনিধি চিন্ময় মণ্ডলের কথায়, ‘কোর্টে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে কী ভাবে জেতা যায়, সেটা আগে দেখা দরকার। ওটাই পাখির চোখ। পরীক্ষা পরের ব্যাপার।’

    অন্যদিকে, ‘নট স্পেসিফিক্যালি টেন্টেড’ ক্যাটিগরির একদল শিক্ষক এ দিন অভিযানে সামিল হন। বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়াটিতে ১,৮০৩ জন এই ক্যাটিগরির টিচার। এঁদেরই একাংশ বুধবার সকালে হাজরা মোড়ে বিক্ষোভ দেখান।

    এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আমরা স্কুলে যেতে পারছি না, বেতনও মিলছে না।’ পুলিশ অবশ্য এঁদের সরিয়ে দেয়। তাঁদের ধরপাকড়ও করা হয় বলে অভিযোগ।

  • Link to this news (এই সময়)